ভাগলপুরের বাড়িতে শহিদ রতন ঠাকুরের শোকার্ত পরিবার (পিটিআই)
পাটনা/ ভাগলপুর: একটা মানুষ মানে সহস্র ইচ্ছা, একটা মানুষ মানেই কয়েক লক্ষ স্বপ্ন, কয়েক কোটি মুহূর্ত গড়ার আকাঙ্খা। সমস্ত কিছুই গুলি আর বোমার সামনে নিতান্তই অর্বাচীন শোনায়। দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই প্রতিবার এমন হাজারো স্বপ্নের লাশ ডিঙিয়ে দেশ এগিয়ে যায়, ভোট এসে যায়, মানুষ ভুলেও যায়। ভুলতে পারেন না ওই স্বপ্নদর্শীদের পরিবার। সঞ্জয় কুমার সিং এবং রতন কুমার ঠাকুরের পরিবারও ঘটনাচক্রে এমনই স্বপ্নভঙ্গের দলে পড়ে গিয়েছেন বৃহস্পতিবার পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলার পরে। নিহত ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্যের মধ্যে এই দুইজনও ছিলেন সেইদিন।
Pulwama Attack: ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছিল জওয়ানদের দেহ, কিভাবে সনাক্ত করল CRPF
সার্জেন্ট সিংয়ের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে যখন তারেঘনা ডিহ থেকে সেই ভয়ঙ্কর ফোনটা আসে, তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারেননি। পরে যখন ধাতস্থ হন, শোক মাখা ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। “আমরা সরকারের কাছ থেকে শক্তিশালী প্রতিশোধ চাই, আরেকটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চাই। সীমান্ত জুড়ে সন্ত্রাসী হামলায় আমরা কতজনকে হারাব আর?” প্রশ্ন তোলেন তাঁর এক বন্ধু।
সার্জেন্টের সিংয়ের স্ত্রী ববিতা, স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে ভেঙে পড়েছেন। এরই মাঝে দুই মেয়েকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন ক্রমশ। দীর্ঘ এক মাসের ছুটি কাটিয়ে গত সপ্তাহেই বাড়ি থেকে কাশ্মীরে চলে যান সঞ্জয়।
সঞ্জয়ের বাবা মহেন্দ্র প্রসাদ, পরিবারের ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ছেলে শহিদ হয়েছে, কিন্তু আমাদের পরিবারকে কীভাবে চলবে তা সরকারকেই বিবেচনা করতে হবে। সঞ্জয়ের দুই কন্যা আছে। এবার কাশ্মীর যাওয়ার আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ফিরে এসে বড় মেয়ের বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন কী হবে কিছুই জানি না।” সঞ্জয়ের বাবা মহেন্দ্রও তাঁর যুবা বয়সে সিআরপিএফে চাকরি করতেন। সরকার তাঁদের জীবন যাপনের দায়িত্ব নিক- এটাই এখন মূল দাবি তাঁর পরিবারের।
ভাগলপুরের বাসিন্দা রতন কুমার ঠাকুরের পরিবারের অবস্থাও একই। রতনের চারবছরের একটি পুত্র রয়েছে, এবং তাঁর স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী। দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখতে বাবা ফিরে আসবেন না আর কোনওদিনও। সিআরপিএফ কনস্টেবল রতনের বাবা নিরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “রতন আমাদের বলেছিল যে, শ্রীনগরের কাজে যোগ দিয়েই সন্ধ্যেবেলা ফোন করবে আমাদের। ফোন এল, রতনের ফোন নয়, রতনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফোন এল শ্রীনগর থেকে।”
গোটা দেশকে দোষ দেওয়া যায় কি? জঙ্গি হামলার পর মন্তব্য সিধুর, ক্ষুব্ধ নেট বিশ্ব
কনস্টেবল রতনের চাকরির মাইনেটাই ছিল ঠাকুর পরিবারের দিন গুজরানের একমাত্র নিশ্চিত উপায়। সম্প্রতি গ্রামের বাসা ছেড়ে ভাগলপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তাঁরা। রতনের বাবা বলেন, “ওর ছোট ভাই এখন বিএ পড়ছে, ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ও'ও সেনাতেই যোগ দিক। শত্রুকে অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে।”
কিন্তু স্রেফ প্রতিহিংসা দিয়ে তো পেট ভরে না! রাজনন্দিনী (কনস্টেবল রতন ঠাকুরের বিধবা স্ত্রী) এখনও বয়সে অনেকটাই ছোট, দীর্ঘ জীবন পড়ে আছে তাঁর। তাঁর গর্ভস্থ সন্তানও কি যুদ্ধে যেতে চাইবে আর? প্রশ্নগুলো সহজ....উত্তরগুলোই কেবল খুঁজে বেড়াচ্ছে সকলে।