হাইলাইটস
- রাফাল যুদ্ধ বিমান নিয়ে আলোচনায় উত্তাল লোকসভা
- চুক্তি প্রসঙ্গে তরজায় জড়ালেন কংগ্রেস সভাপতি এবং জেটলি
- কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করল তৃণমূল
তিন তিন বার অধিবেশন মুলতবি, এআইএডিএমকে সাংসদদের অন্য ইস্যুতে বিক্ষোভের মাঝেই রাফালে যুদ্ধ বিমান নিয়ে আলোচনায় জড়াল কংগ্রেস এবং কেন্দ্র। রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বিতর্কে অংশ নিয়ে আরও একবার প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন রাহুল। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর সাহস নেই ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন, তাঁর উত্তর দেওয়ার সাহস নেই। তিনি ৯৫ মিনিট ধরে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন আর সংসদে উত্তর দিতে পারেন না! গতকালের সাক্ষাৎকার দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ক্লান্ত। আর তাঁকে বলেতে শোনা গেল তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি। কিন্তু আসলে গোটা দেশ তাঁর থেকে জবাব চায়। তিনি বলেন , প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার সাহস নেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামণকে নিশানা করে রাহুল বলেন তিনি এআইএডিএমকে – সদস্যদের পেছনে আত্মগোপন করে আছেন। পাল্টা কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করায় পাল্টা রাহুলকে বেঁধেন জেটলি। তিনি বলেন একটি কমব্যাট যুদ্ধ বিমান কেমন হয় যিনি জানেন না তিনি কংগ্রেসের সভাপতি।
এরপর কংগ্রেস সভাপতি একটি অডিও টেপ বাজাতে চান। তাঁর দাবি তাতে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী তথা গোয়ার এক মন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে প্রাক্তন প্রতিরক্ষা তথা সে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকর বলেছেন কাছে রাফাল সংক্রান্ত ফাইল তাঁর শোয়ার ঘরে রাখা আছে।
স্পিকার জানতে চান তিনি কি এই টেপের দায়িত্ব নিচ্ছেন। আগেই টুইট করে নিজের প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন পারিকর। যখন এই যুদ্ধ বিমান কেনা হয় তখন পারিকরের হাতেই ছিল মন্ত্রক। এরপর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন পারিকর। রাহুলের দাবি টেপে পারিকরকে বলতে শোনা যাচ্ছে রাফাল ফাইল তাঁর শোয়ার ঘরে পড়ে আছে।
এদিকে রাফাল বিতর্ক প্রসঙ্গে আগের রায় খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেন দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁদের আবেদন ১৪ ডিসেম্বর রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হোক। সেদিন সুপ্রিম কোর্ট বলে এই যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে এমন কোনও কিছু হয়নি যা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
তিন আবেদনককারীর দাবি কেন্দ্রীয় সরকারে দেওয়া ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রকাশ্য আদালতে শুনানিরও দাবি করা হয়েছে আবেদনকারীদের তরফে।
একটি অডিও টেপ চালান কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, যার সত্যতা যাচাই করে নি এনডিটিভি।সেখানে তিনঘন্টার একটি ক্যাবিনেট মিটিং সম্পর্কে অপরিচিতের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন বিশ্বজিত রানে এবং তাঁকে "বিষয়টি গোপন রাখতে" বলছেন।
একটি কন্ঠস্বর, যেটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বজিত রানে, তিনি বলছেন, "মুখ্যমন্ত্রী একটি খুবই মজার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমার শোয়ার ঘরেই রাফাল সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে যায়"। উচ্ছ্বসিত গলায় দ্বিতীয়জনকে বলতে শোনা গেছে, "কী বলছেন"! এরপরেই মন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, "মন্ত্রিসভার আপনার পরিচিত কারও কাছে বিষয়টি যাচাই করতে নিতে পারেন। তিনি যা বলেছেন, অর্থের বিনিময়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং নিজের ফ্ল্যাটের শোয়ার ঘরে রাফালের সমস্ত নথি রয়েছে"।
যদিও পুরো ভিডিওটি বিকৃত বলে দাবি করেছেন রানে। পাশাপাশি কংগ্রেসকে তোপ দেগে তিনি বলেছেন, "একটি বিকৃত ভিডিও পরিবেশনের মতো একটি নিম্নমানের কাজ করা বন্ধ করুক কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি অপরাধমূলক মামলার জন্য এই বিষয়গুলি আমি বলেছি। রাফালের কোনও নথি নিয়ে পারিক্করের সঙ্গে আমার কোনও কথোপকথন হয় নি"।
রাফাল নিয়ে গতমাসেই কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বস্তি দিয়েছে সু্প্রিম কোর্ট। রাফাল চুক্তি নিয়ে সন্দেহের কোনও কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। ৫৯ হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের লাগাতার আক্রমণের ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ।
তদন্তের দাবিও খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। পাশাপাশি অনিল আম্বানির সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে দাসোর সঙ্গে চু্ক্তি করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস, তাও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, "কোনও বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মতো প্রমাণ নেই"।
সেই রায়কে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ শৌরী, যশোবন্ত সিনহা এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভুষণ।
রাফাল প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে আক্রমণ শানালেন দমদমের তৃনমূল সাংসদ সৌগত রায়। মেঘনাদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মেঘনাদের মতো অর্থমন্ত্রীর পেছনে আত্মগোপন করছেন প্রধানমন্ত্রীবক্তব্যের এক জায়গায় তিনি বলেন বিজেপির বাহুবলীরা বাধা দিচ্ছে। সে সময় তৃণমুল সাংসদদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপির সাংসদরা। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন। স্পিকার বার বার তাঁকে নিজের আসন গ্রহন করতে বলেন। এরপর আবার বলতে শুরু করেন সৌগত। তখন রাফাল চুক্তি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ডিস্ক্লেইমারঃ রাফাল কভারেজের জন্য অনীল আম্বানি রিলায়েন্স সংস্থা এনডিটিভির বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটির মামলা করেছে।