রাখী বন্ধন (Raksha Bandhan) শুধুই অনুষ্ঠান নয়। ভাই-বোনের চিরন্তন ভালোবাসা-স্নেহের প্রতীক। যুগে যুগে হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এইদিন দীর্ঘায়ু এবং মঙ্গল কামনা করে বোনেরা ভাইদের হাতে রাখী (Raksha Sutra) বেঁধে দেন। বদলে, ভাইয়েরা তাঁদের বোনেদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব নেন। বোনেদের মুখে হাসি ফোটাতে ভরে দেন উপহারের ঝুলি (Rakhi Gifts)। এই বছর কবে রাখীপূর্ণিমা পালিত হচ্ছে? রাখী পূর্ণিমার মাহাত্ম্যই বা কী? কোন সময়ে ভাইকে রাখী পরানোর উপযুক্ত সময়? জেনে নিন সবটাই---
বাংলা ক্যালেন্ডার এবং পাঁজি অনুযায়ী প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমার (Sawan Purnima) দিনে এই উৎসব ধুমধাম করে পালিত হয়। ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে তাই, অগাস্ট অর্থাৎ চলতি মাসেই পালিত হয় রাখীবন্ধন। এবছর তিনি এবং নক্ষত্র অনুযায়ী দিনটি পালিত হবে ১৫ অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবসে (15 August, Independence Day)।
রাখীবন্ধনের গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম এই উৎসব। এই দিন ভাইয়ের মঙ্গলকামনা করে তার হাতে রাখী বেঁধে দেন বোনেরা। ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ককে আরও জোরালো করতেই প্রাচীন কাল থেকে এই উৎসব ধুমধামের সঙ্গে পালন করেন সবাই। যদিও এক এক রাজ্যের রাখী বন্ধনের নিয়ম এক একরকম। যেমন, মহারাষ্ট্রে এই দিন জলদেবতা বরুণের পুজো করা হয়। কথিত আছে, পবিত্র নদীতে স্নান করে সূর্যদেবের পুজো করলে নাকি সমস্ত পাপের বিনাশ ঘটে।
রাখীবন্ধনের দিন আর সময়
এবছর শ্রাবণ মাসের ঝুলন যাত্রা আর রাখী পূর্ণিমা তিথি একদিন আগে পরে পড়েছে।
পূর্ণিমা পড়ছে: ১৪ অগাস্ট রাত ৯.১৫ মিনিটে।
পূর্ণিমা ছাড়ছে: ১৫ অগাস্ট সকালে সাড়ে ১১টায়
কখন রাখী পরাবেন
সাধারণত দুপুরের পর থেকে রাখীবন্ধন শুরু হয়। ভাইয়ের হাতে রাখী বাঁধার উপযুক্ত সময় বিকেল। তবে পূর্ণিমা সকালে পড়লে তখন সকালেই রাখী পরাতে হবে। এবছর ১৪ অগাস্ট রাতে যেহেতু পূর্ণিমা পড়ছে তাই পরের দিন অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই উৎসব পালিত হবে। এবং সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকবে। পুরাণ বলছে, রাবণের বোনেরা নাকি তিথি না মেনে ভাদ্র মাসে রাবণের হাতে রাখী বেঁধেছিলেন। তাই রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
রাখী বন্ধনের সময়: ১৫ অগাস্ট সকাল ১০ টা ২২ মিনিট থেকে রাত ৮.০৮ মিনিট পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ ঘণ্টা বোনেরা রাখী পরাতে পারবেন ভাইদের।
পুজোর বিধি
রাখী পূর্ণিমার দিন ভাইয়ের হাতে রাখী বাঁধার আগে জেনে নিন কীভাবে পুজো সারবেন:
- সবার আগে থালায় প্রদীপ, হলুদ সর্ষে, কুমকুম আর রাখী নিন।
- এবার ভাইয়ের কপালে কুমকুমের ফোঁটা দিয়ে হাতে রাখি বেঁধে দিন।
- রাখী পরানোর পর প্রদীপ ঘুরিয়ে ভাইয়ের আরতি করুন।
- এবার মিষ্টিমুখের পালা.
- ভাই বয়সে বড় হলে আশীর্বাদ নিন।
- আরতির সময় মন্ত্র বলুন:
ওঁ, যেন বহ্নি বদ্রী বলী রাজা দানবেন্দ্র মহাবলঃ।
তেন ত্বোমাপি বন্ধামি রক্ষে মা চল মা চল।।
পুরাণে রাখীর গুরুত্ব
বামন অবতার কথা: স্বর্গে তখন দাপটের সঙ্গে অসুররাজ বলির রাজত্ব। অসুরদের দাপটে ভীত ইন্দ্র ভগবান বিষ্ণুর শরণ নেন। বিষ্ণু বামন অবতার সেজে রাজা বলির কাছে ভিক্ষে চান তিন পা জমি। রাজা বলি সম্মত হলে বামন অবতার দুই পায়ে স্বর্গ আর মর্ত্য অধিকার করে নেন। তৃতীয় পা রাখার জন্য তখন বলি নিজের মাথা এগিয়ে দেন।
ভগবান বামন এভাবে বলিকে দমন করলে স্বর্গে শান্তি ফিরে আসে। বলির এই দানে খুশি হয়ে এরপর বিষ্ণু বর দিতে চাইলে অসুররাজ ভগবান বিষ্ণুকে পাতালে বসবাস করার অনুরোধ জানান। এতে বাধ্য হয়ে বিষ্ণুকে পাতালে যেতে হয়। তখন বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষ্মী দরিদ্র স্ত্রী সেজে বলির হাতে রাখী পড়ান এবং বিষ্ণুকে স্বর্গে ফিরিয়ে আনার প্রার্থনা করেন। বোনের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রাখতে রাজা বলি রাজি হন এবং বিষ্ণু ফিরে আসেন স্বর্গে।
Rakshabandhan 2019: বোনের মুখে হাসি ফোটাতে তুলে দিন এই অনন্য ৮ উপহার
দ্রৌপদী-শ্রীকৃষ্ণ কথা: মহাভারতে কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণ যখন সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালকে বধ করেছিলেন তখন তাঁর তর্জনিতে চোট লেগে রক্তপাত হয়েছিল। সেই সময় দ্রৌপদী নিজের শাড়ির পাড় ছিঁড়ে প্রিয় সখার আঙুলে বেঁধে দিয়েছিলেন। এই ঘটনা শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন হওয়ায় একেও পুরাণে রাখীবন্ধন হিসেবেই দেখা হয়।
আলেকজান্ডার আর পুরুর কথা: আলেকজান্ডার আর রাজা পুরুর শত্রুতার কথা সবাই জানেন। এই শত্রুতায় রাশ টানতেই একসময় আলেকজান্ডারের স্ত্রী পুরুকে ভাই সম্বোধন করে রাখী পরিয়েছিলেন। এবং প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়ে ছিলেন, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হলেও আলেকজান্ডারকে পুরু প্রাণে না মারেন। বোনকে দেওয়া এই প্রতিজ্ঞা পালন করেছিলেন পুরুরাজ। যুদ্ধে পরাস্ত করেও তাঁকে প্রাণে মারেননি।