তিন সন্তানের বাবা ৩৩ বছর বয়সী রামজাল মিনা রাজস্থানের কারাউলি জেলার ভাজেরা গ্রামের বাসিন্দা
নিউ দিল্লি: সারাবছরই ছাত্র আন্দোলনের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে শিরোনামে থাকে দেশের অন্যতম সেরা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (Jawaharlal Nehru University)। সম্পতি ফের মানুষের মনে ও মাথায় জায়গা করে নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এবার ছাত্র আন্দোলন নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তারক্ষীর কারণে। রামজাল মিনা (Ramjal Meena) গত পাঁচ বছর ধরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) একজন চৌকিদারের কাজ করছেন। সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়ে রাশিয়ান ভাষায় স্নাতক (BA (Honours) course in Russian) পঠনপাঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় (JNU entrance examination) উত্তীর্ণ হয়েছেন রামজাল। রাজস্থানের কারাউলি জেলার ভাজেরা গ্রামের তিন সন্তানের বাবা ৩৩ বছর বয়সী রামজাল প্রথম জেএনইউর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসে বলেন, “আমি ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে এখানে কাজ শুরু করি, তখন আমি এখানে শিক্ষার পরিবেশ দেখি। তখনই ছাত্র হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম।” জেএনইউর (JNU) অন্যান্য সহকর্মীদের মতো তিনিও এখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মস্তিষ্কের মৃত্যুর পর অঙ্গদান, মৃত চিন্ময়ের দেহাংশে বাঁচলেন চারজন মানুষ
২০১৮ সালে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক (B.A in Political Science from Rajasthan University) রামজাল মিনা (Ramjal Meena) বলেন, “আমি বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করেছি এবং সাধারণ জ্ঞান ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়গুলির জন্য সেই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করছি। এছাড়া, যখন আমি জেএনইউতে (JNU) পড়াশোনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম তখন ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন পড়ুয়া আমাকে পড়াশোনার বইপত্র, নোটস দিয়ে সাহায্য করেছিল।”
প্রবেশিকার প্রস্তুতির জন্য দিনে কমপক্ষে ৪ ঘন্টা পড়াশোনা করেন রামজাল। তিনি বলেন, “আমার চাকরির অংশ হিসেবেই ক্যাম্পাসের ছাত্র এবং অধ্যাপকদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এখানে প্রত্যেকেই আমাকে উৎসাহিত করেছেন।”
পরিবারের একমাত্র রুটিরুজি উপার্জনকারী রামজাল আরও বলেন, “আমার ক্লাস শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। আমার চাকরি কী হবে এবং কীভাবে আমার পরিবার চলবে এই চিন্তাই আমাকে ভাবাচ্ছে এখন। আশা করি কোনও না কোনও উপায় বেরিয়েই আসবে।” কিন্তু দেশের রাজধানীস্থিত শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো সম্পন্ন করার পরে জীবনে কী করবেন তা সম্পর্কে নিশ্চিত রামজাল।
অসমের বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫২ লক্ষ মানুষ, এখনও পর্যন্ত মৃত ২০
তিনি বলেন, “ভাষার ক্ষেত্রে অনেকগুলি সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দিল্লি শহরেই বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করি কোনও দূতাবাসে বা অফিসে অনুবাদকের প্রয়োজন হলে সেখানে চাকরি পেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ইদানীং ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার (UPSC Civil Services) প্রস্তুতিও নিচ্ছি। ভবিষ্যতে কী হবে তা তো আমরা জানি না। যখন আমি জেএনইউতে এলাম, তখন আমি ছাত্রদের সঙ্গে মিশলাম, ওদের গুণ দেখে আমি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলাম। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমার বাচ্চাদেরও এই মানে পৌঁছতে হবে। তাই আমি আমার সন্তানদের দিল্লিতে নিয়ে আসি এবং এখন ওরা নবম শ্রেণি, সপ্তম শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।”
মুনিরকা গ্রামে, জেএনইউ (JNU)এর প্রধান ফটকের সামনে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন নামজাল। ছোট ভাই মধ্যপ্রদেশে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন। রামজাল মিনা রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন।