রঞ্জনা সরকার ও শ্রেয়সী রাকা দাস
ফ্যাশন দুনিয়া! শুনলেই মনে পড়ে যায় জমকালো পোশাক, ঝলমলে র্যাম্পওয়াক, চূড়ান্ত সমস্ত নকশার পোশাকে রঙবেরঙের মডেল। ফ্যাশন বিশ্বে আটপৌরে ঘরানার ছাপ খুঁজে পেতে বিস্তর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তারপর একে একে মূল স্রোতের ফ্যাশনে এসে জুড়েছে তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে গামছা, খেশ থেকে শুরু করে ছাপা শাড়ি। বাংলার ঐতিহ্যের শিকড়ে রয়েছে যে কাঁথা সেলাই তাও ফ্যাশন দুনিয়ার সাবলীল অংশ হয়ে উঠেছে ক্রমশ। তবে নেপথ্যের কারিগরদের কথা অনেকেরই অজানা। কাঁথা সংস্কৃতিকে পোশাকের অংশ করে তা মূল স্রোতের ফ্যাশনে এনেছেন যারা তাঁর মধ্যে অন্যতম রঞ্জনা সরকার।
শুরুটা শান্তিনিকেতনেই। সাল ১৯৮৫। তারপর একে একে পশ্চিমবাংলা, বাংলা ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যেও পাড়ি দিয়েছে কাঁথা সেলাই করা অসাধারণ সমস্ত শাড়ি। তবে শুধু সেলাই করাটাই কাজ নয়। শাড়ি বোনা থেকে শুরু করে শাড়ি রঙ করা, তাতে সেলাই করা সমস্ত কিছুই নিখুঁত যত্নে সারেন রঞ্জনা। আর তাঁর সমস্ত কাজই এক্সক্লুসিভ। নিজের তৈরি ডিজাইনের মাত্র চারখানি শাড়ি তৈরি করেন রঞ্জনা। বাংলা তথা ভারতের নিজস্ব ঘরানার ছাপ স্পষ্ট প্রতিটি নকশাতেই। ঐতিহ্যবাহী নানা নকশাকেই কাঁথা সেলাইয়ের মাধ্যমে শাড়িতে ফুটিয়ে তোলেন এই শিল্পী। আর এই শিল্পকে এবার মানুষের আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছেন শ্রেয়সী! শ্রেয়সী রাকা দাস নামেই ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজের কাজ ইতিমধ্যেই এনে ফেলেছেন এই তন্বী। খাদি থেকে শুরু করে খেশ, প্রাকৃতিক ফ্যাব্রিক দিয়ে সহজ জামা, ঝাড়বাতি জামার মতো সহজ অথচ সুন্দর পোশাকের নতুন এক ঘরানা তৈরি করেছেন শ্রেয়সী। এবার রঞ্জনা সরকারের তৈরি বেশ কিছু শাড়ির সঙ্গে আরও বহু মানুষের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন রাকা।
শ্রেয়সীর কথায়, “শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা হওয়ায় এবং পারিবারিক যোগসূত্রতার কারণে আলাপ ছিলই মিঠু পিসির (রঞ্জনা সরকার) সঙ্গে। বাকিটা স্নেহ, কাজের প্রতি ভালোবাসা আর ভরসার বুনন মাত্র।” একই কথা প্রবীণ শিল্পীর গলাতেও, “রাকাকে ভীষণ স্নেহ করি। আমার কাজকে ও এত মানুষের কাছে ফের পৌঁছতে সাহায্য করছে, আমি নিজে কতটা এসব করে উঠতে পারতাম জানা নেই। তবে ভার্চুয়াল মাধ্যম আর এই ঐতিহ্যবাহী কাজের মেলবন্ধন হওয়াটা দরকার ছিল। রাকা সেই সেতুটা হয়ে এগিয়ে এসেছে।”
শান্তিনিকেতন ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিশেষত মুসলিম মহিলাদের নিখুঁত সেলাইয়ে একের পর এক শাড়ি তৈরির কাজ চলে। রঞ্জনা সরকার জানান, এই লকডাউন পর্বেও বাধা পড়েনি সেভাবে। “আমি প্রতি মুহূর্তে এই মানুষদের থেকেই শিখি। আমি তো কেবল ডিজাইন করি, রঙ বেছে দিই, কীভাবে কী হবে বলে দিই, কারিগরের হাত বাকিটা সামাল দেয়,” জানান তিনি।