সৃষ্টিসুখের উল্লাসে সৃজিৎ
কলকাতা: ইতিহাস বলছে, সাল ১৯৪৫-এ জাপান অধিকৃত ফরমোসায় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose)। দেশ এবং দেশবাসী বিশ্বাস করেনি। নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে ধোঁয়াশা থাকতে থাকতেই ১৯৮৩-তে খোঁজ মেলে গুমনামি বাবার (Gumnami Baba)। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে নাকি অনেক মিল ছিল নেতাজির। স্থায়ীয় মানুষেরা তাঁকে ভগবানজি বলে ডাকতেন। এই সন্ন্যাসী থাকতেন রামভবনে।
শুধুই ছবি বানাতে পারি, তাই ‘গোত্র'ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা: নন্দিতা রায়
এই ভগবানজি ওরফে গুমনামি বাবার মৃত্যু হয় ১৯৮৫ সালে। তারপরে তাঁর বাড়ি থেকে নাকি উদ্ধার হয় এমন কিছু জিনিস যাতে স্বাক্ষর ছিল নেতাজির। সেখানে ছবিও ছিল নেতাজির। যা নাকি নেতাজির মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের। ধোঁয়াশা আরও ঘন হয় এরপর থেকেই। আরও শোনা গেছে, নেতাজির ১০২ বছরের ড্রাইভার দাবি করেছিলেন, বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি নেতাজি! তাহলে কি গুমনামি বাবা-র ছদ্মবেশেই ছিলেন নেতাজি আমাদের মধ্যে? ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত? আমরা দেখেও বুঝতে পারিনি!
এমন একটি বিতর্কিত, রহস্যময় বিষয় হাতের গোড়ায় ঘোরাফেরা করবে আর তাঁকে ক্যামেরাবন্দি করবেন না চতুষ্কোণ, ভিঞ্চিদা-র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherjee), কী করে হয়? বিশেষ করে যাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের পয়লা সারিতে রহস্য-রোমাঞ্চ জায়গা! সেই তাগিদ থেকে ২০১৮-র ১৮ অগাস্ট নেতাজির ১২৩ তম জন্মবার্ষিকীতে এসভিএফ-এর (SVF) সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পরিচালক ঘোষণা করেন নতুন ছবির নাম, ‘গুমনামি বাবা' (Gumnami Baba)। যেখানে গুমনামি বাবার ভূমিকায় দেখা যাবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে (Prosenjit Chatterjee)।
প্রায় এক বছর ধরে শুট করার পর ছবির শুটিংয়ের কাজ প্রায় শেষ। এতদিন চলছিল ডাবিং (Dubbing Has Been Completed )। সেই কাজও মিটিয়ে ফেলেছেন ভালোভাবেই। ট্যুইট করে জানিয়েছে টিম গুমনামি বাবা। ট্যুইটে দেখা যাচ্ছে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তী এবং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে। প্রত্যেকের মুখেই সাফল্যের হাসি। ইতিমধ্যেই ট্যুইটটি রি-ট্যুইট হয়েছে ১৭ বার। লাইক পেয়েছে শতাধিক। ট্যুইটে অনেকেই পরিচালক এবং গোটা টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ছবি নিয়ে আগে সৃজিত বলেছেন, সবাই আজও খুঁজছে নেতাজিকে। বেশির ভাগ মানুষ আজও বিশ্বাস করে তিনি আছেন, কোনও না কোনো ছদ্মবেশে। আমাদের মধ্যে। যেমন, গুমনামি বাবা। গুমনামি বাবার মৃত্যুর পরেও তাঁকে নিয়ে যেমন মানুষের মনে ধোঁয়াশা, রহস্য লুকিয়ে নেতাজি অন্তর্ধান নিয়েও। তিনি যদি বিমান দুর্ঘটনায় মারা না যান তাহলে তিনি কোথায় ছিলেন? এই গুমনামি বাবা-ই বা কে? এত প্রশ্ন, এত ধোঁয়াশা, এত রহস্যের সমাধান খুঁজতেই এই ছবি তৈরি। এখনও ২৩ জানিয়ারি এলে নেতাজিকে নিয়ে উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বাঙালির সেই সেন্টিমেন্ট এই ছবির মূলধন।
যদিও নেতাজির জীবনের ওপর তৈরি এই ছবির বিরোধিতা করেছেন বিজেপি সাংসদ চন্দ্র বসু। তাঁর মতে, নেতাজিকে নিয়ে কোনো ছবি করতে দেওয়া হবে না। এত সস্তার প্রচারে তাঁকে ধরে টানাটানি কেন! তিনি আজও বাঙালির গর্ব, বাঙালির অনুভূতি। বসু পরিবারের কোনো অনুমতি না নিয়েই এই ছবি বানানো হয়েছে। তাই ছবির মুক্তি বন্ধ করতে আইনের দ্বারস্থ হবে নেতাজির পরিবার। দরকারে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হবে মামলা।
‘মৃদু ধমকে মহানায়ক বলেছিলেন, যা সহ্য হয় না তা খাওয়া কেন!' লিলি চক্রবর্তী
চন্দ্র বসুর প্রতিবাদের প্রত্যুত্তরে যদিও মুখ খোলেননি পরিচালক এবং প্রযওজক সংস্থা। তবে সব ঠিক থাকলে পুজোয় সম্ভবত মুক্তি পেতে পারে সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটির হেভি ওয়েট ছবি 'গুমনামি বাবা'।