152 কোটি টাকা! গত সপ্তাহে কর্নাটকে নির্বাচন কমিশনের বাজেয়াপ্ত করা নগদ অর্থ ও সম্পত্তির মোট মূল্য হল এটাই। নির্বাচন কমিশনের বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে গোটা দেশে এটা দ্বিতীয় সর্বোত্তম।
কর্নাটক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য যদিও নতুন নয়। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, কয়লাখনির মালিক, শিক্ষাব্যবসায় থাকা ধনকুবের, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামানো মানুষরাই প্রধানত এই রাজ্যের নির্বাচনে প্রার্থী হন। যার ফলে নামে নির্বাচন হলেও এ এক প্রকার টাকা ছড়ানোর খেলাও বটে। শুনতে খারাপ লাগলে, এই বাজেয়াপ্ত অর্থের একটি ভগ্নাংশ অবৈধ পথে চলে যেত ভোটারদের হাতে। জাতীয় পার্টির এক কর্মী এই সংবাদদাতাকে বলছিলেন, কীভাবে ভাগ হয়ে গিয়ে খরচ হয় এই অবৈধ অর্থ। যে কোনও সাধারণ প্রার্থীরও নির্বাচনের সময় একেবারে সামান্যতম খরচা বলতেও কম করে 3.5 কোটি থেকে 4 কোটি টাকা। তাঁর কেন্দ্রের জন্য এই টাকাটা হিসাবে ধরাই থাকে।
এই গোছা গোছা টাকার সিংহভাগ বাজারে উড়তে শুরু করে, অস্যার্থে ভোটদাতাদের কাছে পৌঁছে য়েতে শুরু করে, নির্বাচনের দিন দশেক আগে থেকে। প্রত্যেকদিন গড়ে এই বাবদ 25 লক্ষ টাকা করে খরচ করেন এক-একজন প্রার্থী। অঙ্কটা অনেকটা এইরকম:- প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রায় 250 নির্বাচনী কেন্দ্র বা ইলেকটোরাল বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর তরফ থেকে 12 জন লোককে রাখা হবে। যার জন্য তাঁকে খরচ করতে হবে বুথ পিছু 10000 টাকা ( তার মানে, প্রতি বুথ-কর্মচারী পিছু 800 টাকার কিছু বেশি খরচ। খাওয়া এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে |
1000 টাকা * 250 বুথ = 25 লক্ষ টাকা
25 লক্ষ টাকা * 10 দিন= 2.5 কোটি টাকা।
এছাড়াও, প্রার্থীর নিজের নির্বাচনী প্রচারের জন্যও কিছু খরচ রয়েছে। মিছিল, রোড শো, আরও অন্যান্য ধরনের প্রচার ( নির্ভর করছে, প্রার্থী কে এবং তাঁর লড়াই ঠিক কতটা কঠিন- তার ওপর ) খরচ সব মিলিয়ে কমপক্ষে 3.5 কোটি টাকা থেকে 4 কোটি টাকা হয়েই যায়। এমনিতেই, এই খরচটাও নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রার্থী পিছু বেঁধে দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত খরচ যে 28 লক্ষ টাকা, তার থেকেও প্রায় 14 গুণ বেশি। ঘটনা হল, এটাও আসলে একটা ন্যূনতম খরচ বই কিছুই নয়।তাছাড়াও, কর্নাটকের মতো দক্ষিণ ভারতের আরও কিছু রাজ্যের ভোটাররাও আশা করে থাকে যে, ভোট এলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। তাদের এই আশায় প্রকারান্তরে প্রার্থীদের খরচ আরও বাড়িয়ে দেয়। শুধু এটুকুই নয়, আরও কিছু অঙ্কের খেলাও আছে এইখানে। বলছিলেন ওই কর্মী। ধরা যাক, কোনও হেভিওয়েট প্রার্থী ততোধিক হেভিওয়েট একটি নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ালেন। এক্ষেত্রে, স্বভাবতই, তাঁর কাছে পারটা হয়ে দাঁড়াবে এক ঘোরতর ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। ধরা যাক, ওই কেন্দ্রে 2 লক্ষ ভোটার রয়েছে। তার মধ্যে ভোট দেবেন 70 শতাংশ। অর্থাৎ, ভোট দিচ্ছে এমন ভোটারের সংখ্যা হয়ে দাঁড়াল 1.4 লক্ষ। তার মধ্যে মোটামুটি 40000 ভোট প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পাবে, এমনটা ধরে নিয়েই এগোনো হয়। তাহলে, এই প্রার্থীর ‘হাতে থাকা’ মোট ভোটারের সংখ্যা এখন হয়ে দাঁড়াল 1 লক্ষ। এবার এর মধ্যে থেকে হিসাব করে দেখা যাবে মোটামুটি 20-30000 এমন ভোটার রয়েছে, যারা আর কী, ‘ক্লাস ভোটার’। তাদের ওই টাকার দরকার নেই। বাকি পড়ে রইল 70-80000 ভোটার।
এবার এদের সবার কাছে পৌঁছনো সম্ভব না হলেও অন্তত চেষ্টা করা হয় যাতে 50-6000 ভোটারের কাছে ওই নগদ অর্থ নিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়।
কর্মীটি বলছিলেন, কর্নাটকের ভোটে জেতার ক্ষেত্রে এটি হল একদম সহজতম সূত্র। প্রতি ভোটার পিছু য়দি 1000 টাকাও দেওয়া যায় ( কর্নাটকের মতো রাজ্যে ঘুষ হিসাবে যা একেবারেই ন্যূনতম ), তাহলে ওই বেসিক খরচের সঙ্গে আরও 5 কোটি থেকে 6 কোটি টাকা যুক্ত হবে।
আর কোনওভাবে এই অর্থের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে যদি ভোটার পিছু 5000 টাকা হয়, তাহলে আগে বলা ওই বেসিক খরচের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও 25 থেকে 30 কোটি টাকা।
তিনি বলছিলেন, কর্নাটকে এই ‘ভোটার-পিছু 5000 টাকা’-র আসন আছে কুড়িটার মতো। মোট আসনের 10 শতাংশ।
এই 20টি আসনের খরচের হিসাব করলেই বোঝা যায় যে, এই সব আসনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর খরচ মিলিয়ে অঙ্কটা প্রায় 1000 কোটি টাকা থেকে 1200 কোটি টাকা মতো হবে।
এর থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশনের বাজেয়াপ্ত করা 152 কোটি টাকা আসলে একটি
হিমশৈলের চূড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
ঠিক এই জায়গা থেকেই উঠে আসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি, নির্বাচন কমিশনের এত সতর্কতা এত বাধানিষেধ সত্ত্বেও কীভাবে এত সহজে প্রায় সবার চোখের সামনে দিয়েই ঘুরে বেড়ায় এত কোটি কোটি টাকা…