জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার আখান গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি
শ্রীনগর: ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর? কিছু কিছু ফেরা আসলে স্রেফ ফেরা নয়, আরও বেঁধে বেঁধে বেঁচে থাকাও। যেমন বেঁচে রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষরা। যেমন মিশে রয়েছে আজানের শব্দের সঙ্গে মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। পুলওয়ামাতে যে জায়গায় সিআরপিএফের উপর আত্মঘাতী হামলা হয়েছে সেই এলাকা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে মুসলিম ও কাশ্মীরি পণ্ডিতরা মিলে ৮০ বছরের পুরনো মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য হাত মিলিয়েছেন। পুলওয়ামার আখান গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটির সংস্কারের কাজ বহুদিন থেকেই চলছিল। আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হানায় ৪০ জন সিআরপিএফের হত্যা এবং তারপর থেকে একের পর এক হামলা ও পালটা হামলার ঘটনায় সাম্প্রতিক যে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার জেরে বন্ধ ছিল পুনর্নির্মাণের কাজটি।
৫০ বছর পূর্ণ করল দেশের প্রথম উচ্চগতির ট্রেন হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস
মহাশিবরাত্রির দিনে ওই মন্দিরে আগত প্রত্যেককে ঐতিহ্যবাহী কাশ্মিরি খেওয়া চা খাইয়ে কাজ শুরু করেন কাশ্মীরের মুসলিম মানুষেরা। ওই মন্দিরের পাশেই রয়েছে জামিয়া মসজিদ। পুনর্নির্মাণের কাজে জড়িত স্থানীয়রা বলেন, আজানের আহ্বানের সঙ্গে মন্দিরের ঘণ্টা শুনতে ভালোবাসেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মহাম্মদ ইউনুস বলেন, “আমাদের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ৩০ বছর আগে যেমন মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসত একদিক থেকে, অন্যদিকে মসজিদ থেকে ভেসে আসত আজানের সুর, ঠিক তেমনটাই আবার ফিরে পেতে চাই।” মজার ব্যাপার হল, এত ঘটা করে ওই মন্দির পুনর্নিমাণ করার চেষ্টা হলেও ওই মন্দিরে পুজো দেওয়ার মতো পরিবার রয়েছে মাত্র একটিই। ১৯৯০ সাল থেকে ওই এলাকায় মাত্র একটি হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবার রয়েছে। মন্দিরের অবস্থা যখন খুবই খারাপ তখন এই কাশ্মীরি পরিবারই মসজিদে অউকাফ কমিটির কাছে এসে পুনর্নির্মাণের কাজের সহায়তা চায়। বাসিন্দা ভূষণ লাল বলেন, “আমাদের প্রতিবেশীরা যারা ধর্মে মুসলিম তাঁরা এই মন্দিরের প্রতি বেশ শ্রদ্ধা রাখে মনে মনে।”
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দূষিত শহর গুরগাঁও, প্রথম ১০-এ ভারতেরই আরও ৬ শহর: সমীক্ষা
তাঁরই ছোট ভাই সঞ্জয় কুমার বলেন, এই মুসলমান প্রতিবেশীরাই তাঁদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিষয়টি শুধু মন্দিরের সংস্কারের নয়, যখনই সমস্যায় পড়েছি এঁরাই বাঁচিয়েছে। সঞ্জয়ের কথায়, “আমরা এখানে ভাইদের মতোই বাস করি এবং অউকাফ কমিটি আমাদের মন্দিরের পুনর্নির্মাণে চূড়ান্ত সাহায্য করেছে।” সংস্কারের কাজটি পর্যবেক্ষণ করছেন মহাম্মদ মকবুল। তিনি বলেন, “আমরা তাঁদের প্রতিবেশীদের একা অনুভব করতে দিতে চাই না।”