৭৩ বছরের চিকিৎসক দেবেন দত্তকে প্রাণ দিতে হল ক্ষুব্ধ জনতার হাতে।
নয়াদিল্লি: গত কয়েক বছর আগে অবসর নেওয়ার পর অসমের (Assam) চা বাগানের (Tea Estate) রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৭৩ বছরের চিকিৎসক দেবেন দত্তকে প্রাণ দিতে হল রোগীমৃত্যুর পর উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ জনতার হাতে (Lynched)। মর্মান্তিক এই ঘটনা শনিবারের। এস্টেট হাসপাতালে এক চা বাগানের এক কর্মীর মৃত্যু হয়। এরপরই ওই ব্যক্তির সহকর্মীরা একজোট হয়ে আক্রমণ চালায় হাসপাতালে। তখনই তাদের হাতে প্রহৃত হন দেবেনবাবু। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করলেও জখম দেবেনবাবুকে বাঁচানো যায়নি। শনিবার দুপুরে এক কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় আশঙ্কাজনক অবস্থায়। সেই সময় হাসপাতালে কর্মরত নার্স স্যালাইন চালিয়ে দেন। কিন্তু কিছুক্ষম বাদেই মারা যান ওই রোগী। ঘটনার তিন ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আসেন চিকিৎসক দেবেনবাবু।
এরপরই তাঁর উপরে চড়াও হয় ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশ পরে তাঁকে উদ্ধার করে। আক্রমণকারীরা কাঁচের ভাঙা টুকরো নিয়েও হামলা চালায়। রক্তাক্ত দেবেনবাবু প্রয়াত হন।
১৯৭২ সালে অসমের ডিব্রিগড়ের মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে টিওক টি এস্টেটে যোগ দেন তিনি। সেখানে ১১ বছর চাকরি করেন, পরে অন্য টি এস্টেটেও কর্মরত ছিলেন। হাট্টিগড়, কাকাজান, বোরহাট এবং নাহারানি ইত্যাদি টি এস্টেটে চাকরি করার পর ২০০৫ সালে অবসর নেন দেবেন দত্ত।
এরপর গুয়াহাটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মৃদু স্বরে কথা বলা দেবেনবাবুকে সকলেই পছন্দ করতেন।
২০১৪ সালে টিওক এস্টেটে এসে সেখানকার মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে কাজ করা এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘‘উনি নিজেকে সব সময় আপডেটেড রাখতেন নিজের ক্ষেত্রে। সব সময় পড়াশোনা করতেন।''
তিনি জানিয়েছেন, রোগীরাও তাঁকে একজন আদর্শবাদী চিকিৎসক হিসেবে দেখতেন। তাঁর মতে, ‘‘ওঁর মতো একজন মানুষের এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত যাঁদের সেবা করতেন তিনি, তাঁদের হাতেই প্রাণ হারাতে হল তাঁকে।''
চিকিৎসক মহল স্তম্ভিত তাঁর মৃত্যুর খবরে। পশ্চিমবঙ্গের ‘ডক্টরস ফোরাম' জানিয়েছে, ‘‘দেবেনবাবু অবসরের পরও নিজের কর্মক্ষেত্রের মানুষদের সেবা করেছেন। সেখানকার মানুষরা পুলিশের সামনে তাঁকে মেরে ফেলে খুন করে ধন্যবাদ দিল তাঁকে।''