West Bengal: কলকাতার মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিড় জমালেন অসংখ্য ক্রেতা (প্রতীকী ছবি)
হাইলাইটস
- কলকাতার মিষ্টির দোকানগুলো দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত খোলা
- মিষ্টি পাগল বাঙালি ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোতে
- সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দোকানগুলোতে স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় জোর
কলকাতা: ভোজনরসিক বাঙালির শেষপাতে মিষ্টি ছাড়া যেন খাওয়াটা ঠিক জমে না। সেই কথা মনে রেখেই চলতি লকডাউন ( Kolkata Lockdown) পর্বের মধ্যেই প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত মিষ্টির দোকান (Bengal Sweet Shop) খুলে রাখার অনুমতি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকার। আর সেই কথা কানে যেতেই, ৮ থেকে ৮০, কলকাতার পেটুক বাঙালিরা মিষ্টি কিনতে ছুটলেন দোকানে। ফল যা হওয়ার তাই, করোনা সংক্রমণের (Coronavirus) ঝুঁকি বাড়িয়ে মিষ্টির দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল। কিছু কিছু দোকান অবশ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জোর দিয়েছে। যেমন ভবানীপুরের বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিকের দোকান। সেখানে ঢোকার পরেই আপনাকে প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া। রয়েছে মাস্ক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও। এই দোকানের মিষ্টি দই বিখ্যাত। মূলত সেই দই কিনতেই প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছেন সেখানে।
রাজ্যে করোনার বলি আরও ১, মৃত বেড়ে ৪
বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিকের দোকানে আসা এক প্রবীণ ক্রেতা যিনি নিজে পেশায় আবার চিকিৎসক, মুখে মাস্ক পরেই মিষ্টি কিনতে এসেছিলেন। তিনি বললেন, "আমি একজন চিকিৎসক এবং আমি ডায়াবেটিসের রোগী। আমার পরিবারের সবাই মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসে। আমি এই দোকানে আসি কারণ এখানে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যেও বিশেষ মিষ্টি বিক্রি হয়"। চিকিৎসক ডঃ দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়, একজন চিকিৎসক হিসাবে তিনি কি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় উপেক্ষা করে এভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসাটাকে নিরাপদ বলে মনে করছেন? তাতে তাঁর জবাব, "আচ্ছা, এর মধ্যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এটা অনেক দীর্ঘ সময়ের ঘরবন্দি দশা। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে"।
শাকসবজির বাজার করতে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন লুনা এবং তাঁর স্বামী পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। মিষ্টির দোকান খোলা দেখে তাঁরাও আর লোভ সামলাতে পারেননি।
এদিকে শহরের অন্যতম বিখ্যাত এই মিষ্টির দোকানের মালিক সুদীপ মল্লিক দোকান খুলে মিষ্টি বিক্রি শুরু করলেও এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। দেখা গেল, দোকানের গালিচাতে ছোট ছোট গোল দাগ কেটে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্রেতার মধ্যেকার দূরত্ব ১ মিটার। যদিও দোকান মালিক কিন্তু মনে করছেন, ঘণ্টা চারেকের জন্যে মিষ্টির দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাল কাজই করেছে রাজ্য সরকার।
‘‘সীমিত সাধ্যের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা করে দান রাজ্য ও কেন্দ্রের তহবিলে'', টুইট মুখ্যমন্ত্রীর
"হাজার হাজার লিটার দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। মিষ্টি শিল্প রীতিমতো সংকটজনক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই ব্যবস্থা না করা হলে লকডাউনের শেষে রাজ্যের মিষ্টির দোকানগুলোর ব্যবসা গোটাতে বাধ্য হতে হত", বলেন বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিকের মালিক।
তবেই সব মিষ্টির দোকানের মালিকের অবশ্য এক ভাবনা নয়। ১৭৫ বছরের পুরনো গিরিশ চন্দ্র দে এবং নকুর চন্দ্র দে-র মিষ্টির দোকান যেমন বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই মিষ্টি সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক পি নন্দী বলেন, "আমরা আমাদের কারখানা বা দোকানগুলিতে ঠিকভাবে ক্রেতাদের মধ্যে যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবোই সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নই। সুতরাং আমরা এখনও দোকান খুলছি না।"
তবে কিছু কিছু মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকলেও বাকি খোলা দোকানগুলোতে মিষ্টিমুখ করতে দৌড়চ্ছেন নগরবাসী। অনেকে আবার মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলছেন। সব মিলিয়ে করোনা আতঙ্ককে ছাপিয়ে তিলোত্তমার হাওয়ায় এখন মিষ্টি-মিষ্টি গন্ধ।