This Article is From Apr 19, 2019

হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে করা অতি বিতর্কিত মন্তব্য ফেরালেন সাধ্বী প্রজ্ঞা

তাঁর এই মন্তব্য ছড়িয়ে যাওয়ার পর চারিদিকে তুমুল ছিছিক্কার পড়ে যায়।

হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে করা অতি বিতর্কিত মন্তব্য ফেরালেন সাধ্বী প্রজ্ঞা
নিউ দিল্লি:

২৬/১১ মুম্বাই হানার শহিদ হেমন্ত কারকারেকে ‘অভিশাপ' দিয়েছিলেন তিনি, এই মন্তব্য করে বসেছিলেন বিজেপি নেতা সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর। তাঁর এই মন্তব্য ছড়িয়ে যাওয়ার পর চারিদিকে তুমুল ছিছিক্কার পড়ে যায়। তারপরই তিনি জানান যে, ‘তিনি তাঁর কথাগুলো ফিরিয়ে নিচ্ছেন'। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে প্রয়াত হয়েছিলেন হেমন্ত কারকারে। তাঁকে নিশ্চিতভাবেই একজন ‘শহিদ' বলা যায়। তাঁর মন্তব্যের ফলে যে দেশজুড়ে এত আলোড়ন উঠবে, তা সম্ভবত বুঝতে পারেননি সাধ্বী প্রজ্ঞা। স্পষ্টতই বিব্রত এই নেত্রী তারপর জানান, “আমার কথায় যদি আমার শত্রুরা খুশি হয়, তাহলে আমি খুশি হবো না। তাই আমি আমার কথাগুলো ফিরিয়ে নিচ্ছি এবং করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। এমন কোনও কথা আমাদের বলা উচিত নয়, যা আমাদের শত্রুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তাদের হাত শক্ত করে তুলবে। যে যন্ত্রণা আমি পেয়েছি, তা আর কেউ পাক সেটা চাই না। কিন্তু, এই কথাটি অনস্বীকার্য যে, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে প্রাণ দেওয়া হেমন্ত কারকারে নিশ্চিতভাবে একজন শহিদ”।

বিজেপির সমালোচকদের ৪ ঘণ্টার মধ্যে বুঝে নেওয়া হবে দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

যদিও, বিজেপি'র পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সাধ্বী প্রজ্ঞার মন্তব্যটি ‘ব্যক্তিগত'। তিনি নিজে ভাবছেন একটু অন্যরকম। তাঁর কথায়, “আমি যা ভেবেছি, যা মনে করেছি, সেটাই বলেছি। আমার কথাগুলি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখেনি দল। তারা ঠিকই বলেছে। ওটা আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য”।

বুধবারই ভোপাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করা হয় সাধ্বী প্রজ্ঞাকে। বৃহস্পতিবার সাধ্বী প্রজ্ঞার করা মন্তব্যটি যে ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের অভিযুক্ত হিসাবে জেলে যাওয়ার পর তাঁর ওপর হওয়া ‘অকথ্য অত্যাচার'-এর একটি বহিঃপ্রকাশ, সেটিও বলতে চেয়েছিলেন বিজেপির কোনও কোনও নেতা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে সাধ্বী প্রজ্ঞা বলেন যে, “আমি হেমন্ত কারকারেকে বলে দিয়েছিলাম যে, তুমি শেষ হয়ে যাবে। মারা যাবে। দু'মাসেরও কম সময়ের মধ্যে। জঙ্গিহানায়”।

তাঁর চারপাশে থাকা বিজেপি নেতারা এই মন্তব্য শুনে হাততালি দিয়ে ওঠেন।

২৬/ ১১  মুম্বই হামলার সময়  জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে  সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হেমন্ত কারকারে। মহারাষ্ট্র এটিএসের প্রধান হিসেবে মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্ত  করেছিলেন। সাধ্বীকেও জেরা করেছিলেন তিনি। সে কথা মনে করে  সাধ্বী বলেন, “তদন্তকারি দলের তরফে  হেমন্তকে ডেকে  বলা  হয় আমার বিরুদ্ধে  কোনও প্রমাণ না পেলে যেন আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেছিলেন, আমার  বিরুদ্ধে  প্রমাণ জোগাড় করতে যা দরকার তাই করবেন। আমাকে ছাড়বেন না। এতটাই জটিল মনের মানুষ! কারকারে দেশদ্রোহী এবং ধর্ম  বিরোধী ছিলেন”।

'ভুল করে' বিজেপিতে ভোট, ভোটদাতার আঙুল কেটে নিল বিএসপি সমর্থক

এছাড়া, গতকালই, জেলে তাঁর ওপর চলা অত্যাচারের বর্ণনাও দেন তিনি। বলেন, “আমাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছিল। তারপর জেল হেফাজতে রেখে দেওয়া হল ১৩ দিনের জন্য। প্রথম দিন থেকেই ওরা আমাকে প্রবলভাবে মারতে শুরু করল। যখন বেল্ট দিয়ে মারত, আমার গোটা স্নায়ুতন্ত্র অবশ হয়ে যেত। প্রতি দিন এবং রাতে নিয়ম করে নির্মমভাবে মারধর করত আমায়। ওরা চাইত, আমি সেই মারের মুখে স্বীকার করে নিই যে, ওই বিস্ফোরণে আমার হাতও রয়েছে। সারারাত ধরে মারত। সেটা চলত ভোর অবধি। অত্যাচারীদের মুখ বদলে যেত, কিন্তু, অত্যাচারটা বদলাত না”।

তিনি বলে যেতেই থাকেন, “যখন মারতে মারতে ওদের মনে হত, এবার আমার হাত থেকে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে, তখনই ভয়ে থেমে যেত। তারপর গরম জলে নুন মিশিয়ে এনে তাতে আমার হাতটা চুবিয়ে রাখত। যাতে তারপর হাতটা নরম হয়ে গেলে আবার ওই অত্যাচার শুরু করতে পারে”। তিনি আরও দাবি করেন, বহু নারকো টেস্ট ও পলিগ্রাফ টেস্টের জন্য তাঁকে ক্যানসারের চিকিৎসাও করাতে হয়েছিল।

এই অত্যাচারের বিবরণ শুনে যাঁদের মন সামান্য নরম হয়েছিল সাধ্বী প্রজ্ঞার প্রতি, তাঁরাও হেমন্ত কারকারের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যটির জন্য প্রবল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

.