বর্তমানে পারাদ্বীপের বাণিজ্যিক কর অফিসার (সিটিও) হিসেবে কাজ করছেন ঐশ্বর্য রুতুপর্ণা প্রধান
কেন্দরাপাড়া: সম্মতিসূচক গে সেক্স (Concentual Gay Sex) অপরাধ নয়- সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একথা ঘোষণার পরেই নিজের প্রেমিক তথা লিভ-ইন সঙ্গীকে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রথম গেজেটেড সরকারি আধিকারিক।
6 সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইপিসি 377 ধারাকে খারিজ করে রায় দেয় যে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ও ক্যুইয়ার বা LGBTQ গোষ্ঠীর মানুষদেরও সুন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে।
সমকামী বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের আইন ও সম অধিকার বিষয়েও এবার আদালতের রায় ঘোষণা করা উচিৎ- জানাচ্ছেন ঐশ্বর্য রুতুপর্ণা প্রধান (Aishwarya Rutuparna Pradhan)। উড়িষ্যা সরকার 2017 সালে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা তাঁকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চাকরি ক্ষেত্রে সম্মানজনক পরিচয় জানায়।
"এখন বিয়ে বিষয়টি কেবলমাত্র পুরুষ এবং মহিলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। করা হয়। আদালতের উচিৎ আমাদের মত নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ঘটানো যাতে আমরাও বৈধভাবে সেই মানুষটিকে বিয়ে করতে পারি যাকে আমরা প্রেম করি, ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সুপ্রিম কোর্ট নিশ্চয়ই এই অধিকার অর্পণ করবেন আমাদের।" ঐশ্বর্য বলেন। 34 বছর বয়সী ঐশ্বর্য ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রথম প্রতিনিধি যিনি রাষ্ট্রীয় সরকারি কর্মচারী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
ঐশ্বর্যর পূর্বে নাম ছিল রতিকান্ত প্রধান (Ratikanta Pradhan)। 2010 সালে উড়িষ্যা পাবলিক সার্ভিস কমিশন আয়োজিত উড়িষ্যার আর্থিক পরিষেবা পরীক্ষায় সফল হন তিনি। বর্তমানে পারাদ্বীপের বাণিজ্যিক কর অফিসার (সিটিও) হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
"সর্বোচ্চ আদালত 15 এপ্রিল 2014-তে আরেকটি বড় ভূমিকা নেয়। তৃতীয় লিঙ্গের আওতায় ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি খুবই প্রশংসনীয় ছিল। আমি ঠিকই করেছিলেম পুরুষ পরিচয় লিখব না, আমি নিজের তৃতীয় লিঙ্গকেই তুলে ধরব পরিচয় হিসেবে। সরকারকে এই বিষয়ে চিঠিও লিখি। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত অফিসিয়াল রেকর্ডে আমাকে ট্রান্সজেন্ডার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে," বলেন ঐশ্বর্য।
ঐশ্বর্য বলেন, "আমরা সবাই বিশেষ বিবাহ আইন বা LGBTQ সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন আইন বাস্তবায়নের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমার একজন প্রেমিক আছে। আমরা আশা করি যে আমরা শীঘ্রই বিয়ে করব। আমরা এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের অনুকূল বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। বিয়ের পর একটি অনাথ কন্যা শিশুকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছেও রয়েছে আমার।"
উড়িষ্যার কান্ধামাল জেলার জি উদয়গিরি (Udaygiri) ব্লকের কানাবাগিরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ঐশ্বর্য। জনপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করএন তিনি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাও পাশ করেছেন বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কে ক্লার্কের চাকরি করার আগে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ইন্টার্নশিপের কাজ করেছেন তিনি। পরে তিনি রাষ্ট্রীয় সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি বলেন, “আমার সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় কখনোই আমার দায় বা দায়িত্ব ও কর্ত্যব্য থেকে আমাকে সরিয়ে দেয়নি। সাধারণ মানুষ আমার এই পরিচয়কে বেশ গ্রহণ করেছেন এবং তাঁরা সকলেই আমাকে পছন্দ ও শ্রদ্ধা করেন। আমি তৃতীয়-লিঙ্গ হিসাবে কখনোই আলাদা বোধ করিনি।"