টিন রেপ সারভাইভার পুলিশ ফোর্স আসতে চায়, জানিয়েছে NDTV কে
হাইলাইটস
- আট বছর আগে লোকটির সঙ্গে শ্রুজনার বিধবা মায়ের বিয়ে হয়
- সৎ বাবা বাচ্চা মেয়েটিকে এই বলে ভয় দেখায় যে, মা’কে বলে দিলে সে আর ওদের সঙ্
- গত এপ্রিল মাসে, যখন শ্রুজনা প্রথমবারের জন্য রজঃস্বলা হয়, সেই সময়েই তার সৎ
হায়দরাবাদ:
সেই মানুষটার বিরূদ্ধে মুখ খোলার জন্য যথেষ্ট সাহসের দরকার ছিল শ্রুজনার ( নাম পরিবর্তিত), যাকে সে এতদিন ধরে ‘বাবা’ বলে ডেকে এসেছে। আট বছর আগে লোকটির সঙ্গে শ্রুজনার বিধবা মায়ের বিয়ে হয়। গত এপ্রিল মাসে, যখন শ্রুজনা প্রথমবারের জন্য রজঃস্বলা হয়, সেই সময়েই তার সৎ বাবা প্রথমবার যৌন নিগ্রহ করে তাকে। শ্রুজনার মা ওই সময় বাড়ি ছিলেন না। তিনি ছিলেন অফিসে। সৎ বাবা বাচ্চা মেয়েটিকে এই বলে ভয় দেখায় যে, মা’কে বলে দিলে সে আর ওদের সঙ্গে থাকবে না।
ঘটনার চারদিন বাদে মা যখন অফিসে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন শ্রুজনা কাঁদতে কাঁদতে এসে বলে, মা যেন তাকে একা ফেলে রেখে কোথাও না যাএ, তাহলেই তার সৎ বাবা তার সঙ্গে আবার সেই একই কাজ করবে। ঘটনাটি জানার পরেই মেয়েটির মা তার স্বামীকে ঘটনাটি নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করে। প্রথমে লোকটি সবকিছু অস্বীকার করলেও পরে নিজের স্ত্রীয়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলে, মদ আর ড্রাগের প্রভাবে সে ওইদিন ওইরকম কাজ করে ফেলেছে। আর এমনটা হবে না। লোকটির ভঙ্গি দেখে শ্রুজনা ও তার মা বিশ্বাসও করে ফেলে কথাগুলো।
এই বিশ্বাসই কাল হয়।
এই মাসের শুরুতে আবার সে বাচ্চা মেয়েটিকে যৌন নিগ্রহ করে। মেয়েটি এনডিটিভিকে জানিয়েছে- ‘আমাকে প্রথমে অকথ্য গালিগালাজ করে মারতে শুরু করে। আমি দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিই। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না। বাথরুমের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে সে। তারপর বেল্ট দিয়ে মারতে আরম্ভ করে আমায়। তারপর জোর করে যৌন সংসর্গ করতে বাধ্য করে’।
একজনও কি হায়দরাবাদের এত ঘিঞ্জি এই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পাড়ায় তার চিৎকার শুনতে পায়নি? এত এত চিৎকার! উত্তরে মেয়েটি জানায়- ‘পেয়েছিল হয়তো। শুনতে পাওয়ার তো কথা। কিন্তু, সম্ভবত, ভীতির কারণেই কেউ আর এগিয়ে আসেনি সাহায্য করতে। এমনিতেই, এলাকার কেউই জানে না যে, এই লোকটি আমার আসল বাবা নয়। এই কথাটি এমনকি আমার ছোটো ভাইটিও জানে না’।
সৌভাগ্যবশত, শ্রুজনার মা সেই দিন একেবারে হঠাৎ করেই বাড়ি ফিরে আসেন। কোথাও একটা গোলমাল রয়েছে বড়ো ধরনের, তিনি এটা অনুভব করতে পারেন, যখন তার স্বামীকে ফোন করার পর তিনি জানতে পারেন যে, সে ব্যাঙ্কে রয়েছে।
লোকটি শ্রুজনাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল যে, সে যেন মা’কে কিচ্ছুটি না জানায় এবং ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে আসল ঘটনাটি লুকিয়ে রাখা যায়নি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা মেয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়েই তিনি বুঝে যান যে, কী ভয়াবহ সর্বনাশ আবার ঘটে গিয়েছে শ্রুজনার সঙ্গে।
আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তিনি মেয়েকে নিয়ে তড়িঘড়ি পুলিশের কাছে যান। ‘তিনটে থানায় আমাদের ঘুরতে হয়েছিল, লোকটার বিরূদ্ধে অভিয়োগ করার জন্য। কেউই প্রথমে অভিযোগ নিতে রাজি হচ্ছিল না। শেষমেশ প্রায় জোর করে তিন নম্বর থানায় গিয়ে অভিযোগটা দায়ের করা সম্ভব হয়’। মেয়েটি বলছিল। অভিযুক্ত লোকটি ততক্ষণে বেপাত্তা।
পরে আবার স ফোন করে তার স্ত্রীকে। বারবার ক্ষমা চায় আর বলে, সে মেয়েটির অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা পাঠিয়ে দেবে। উদ্দেশ্যটি পরিস্কার। তার বিরূদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা যেন তুলে নেওয়া হয়।
উদ্দেশ্যটি যে সফল হয় না, তা লেখাই সঙ্গত। লোকটিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
বালালা হাকুলা সঙ্গম নামের একটি সংস্থা, যারা চাইল্ড রাইট নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েটি। এনডিটিভিকে সে বলছিল- ‘আমি আর এখানে থাকতে চাই না। বাড়িতে থাকতে চাই না। হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করতে চাই। বাবাকে আমি বলেছিলাম জানেন, আমার সঙ্গে এরকম কোরো না। আমার সঙ্গে এরকম কোরো না। কিছুতেই শোনেনি আমার কথা। আমি হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে চাই। পড়াশোনা করে বড়ো হয়ে পুলিশে জয়েন করতে চাই’। সে আরও জানায় য়ে, তার মা সবসময়েই ঘর এবং ঘরের বাইরের যৌন নিগর্হ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে তাকে বুঝিয়ে এসেছে। সবসময়েই পাশে থেকেছে মেয়ের। মায়ের কাছে সেই কারণে শ্রুজনা কৃতজ্ঞ।
শিশু অধিকার কর্মী অচ্যুত রাও বলেন, শিশু সুরক্ষা আইনকে সরকার অনেক তীক্ষ্ণ করে তুলেছে, সেটা যেমন ঠিক। তেমনই, এটাও ঠিক যে, এই আইনের ফলে শিশুদের সঙ্গে যৌন নিগ্রহের ঘটনা খুব একটা কমেনি। পকসো আইনের আওতায় পড়া প্রায় চার লক্ষ মামলা মুলতুবি রয়েছে। এই সব মামলাগুলোর রায় কবে বেরোবে? কবেই বা জেলে পাঠানো সম্ভব হবে মূল অপরাধীদের’?
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবসময় শিশুদের এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করি মৌনভঙ্গ করার জন্য। ঘটনার শিকার যে হচ্ছে, স যদি এগিয়ে এসে কথা বলে, তবে আমাদের কাজটাও সহজ হয়ে যায়। শ্রুজনার মতো মেয়েদের পাশে জন্য সমাজ এবং সরকার- দু’পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকের সহায়তা দরকার’।
সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শ্রুজনার মা একটি রিটেল স্টোরে বারো ঘন্টার ডিউটি করেন। সকাল দশটা থেকে রাত দশটা। সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে তিনি নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চান না। শ্রুজনা আর বাড়িতে থাকতে চায় না। পুলিশের চাকরি করার স্বপ্ন দেখে। শ্রুজনার মতো নাবালিকাদের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বর্তমানে গোটা দেশ জুড়েই, তা নিয়ে সরকারের আরও পরিস্কারভাবে কথা বলা উচিত, বলেন রাও।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)