This Article is From Dec 05, 2018

শানু লাহিড়ির ছবি মুছে নীল সাদায় সাজছে কলকাতা, এককালের তিলোত্তমা

এই শহরের অনেক প্রবীণ শিল্পীরা বলেন, “রাজনীতিই এখন সবার উপরে এবং পাবলিক আর্টের জন্য কোনও নীতিই নেই। এই শহরটিতে ইদানীং স্থাপন করা মূর্তিগুলি অনান্দনিক এবং শহরের জন্য বেশ বিব্রতকর!”

এই শহরের অনেক প্রবীণ শিল্পীরা বলেন, “রাজনীতিই এখন সবার উপরে এবং পাবলিক আর্টের জন্য কোনও নীতিই নেই।

কলকাতা:

শানু লাহিড়ির নাম শিল্প অনুরাগীদের কাছে নতুন নয়। বিশেষত কলকাতার "পাবলিক আর্টের প্রথম শিল্পী" নামেও পরিচিত শানু লাহিড়ি এই কিছুকাল অব্দিও তাঁর অসাধারণ কাজের জন্য কলকাতার মানুষের মনে প্রায় রোজই উঁকি দিয়ে যেতেন। আদিবাসী ‘পরমা' মূর্তি এই শহরকে উপহার দেন তিনি। রাস্তার উপর ট্রাফিক রাউন্ড আউটে অবস্থিত বিশাল এই ‘পরমা' মূর্তি ২০১৪ সালে সরিয়ে নেয় রাজ্য সরকার। এখন, সেখানে কলকাতার প্রিয় রং নীল-সাদায় আঁকা হয়েছে অলিম্পিক সুইমিং পুলের একটি ম্যুরাল। ৩৩ বছর আগে শানু লাহিড়ির আঁকা ম্যুরালে গ্রামের এক দৃশ্য ফুটে উঠেছিল। সেলিব্রিটি এবং সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন এই শিল্প নির্মাণে।

শিল্পী চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, "সেই সময় আমি কলকাতা সরকারি আর্ট কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। চমৎকার একটি শিল্প ছিল এই কাজটি। উষা উথুপ, অপর্ণা সেনকে আমি নিজে দেখেছি ওই দেওয়ালে ‘আমি কলকাতাকে ভালোবাসি' লিখতে। সব চলে গেছে। সব স্মৃতি চলে গেছে।"

 

p6t30k18

 

স্থানীয়রা বলছেন যে এই রাস্তায় একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির অফিস ছিল। তাঁরাই এই দেওয়ালের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছর আগেই অফিসটি সরে যায় এবং অযত্নে পড়ে থাকে এই শিল্প।

 

রাজ্যে আসছেন মোদী, ১৬ তারিখ শিলিগুড়িতে জনসভা

 

বলাই দোলুই কখনোই শানু লাহিড়িকে দেখেননি কিন্তু তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে জানেন। দেওয়ালে সাদা চুনকামের খবর শুনে অবাক হয়েছেন তিনি। "এটা খুবই খারাপ। শানু লাহিড়ি কলকাতায় পাবলিক আর্টের একজন অগ্রণী ছিলেন। তরুণ শিল্পী অনেকেরই তিনি অনুপ্রেরণা ছিলেন এবং এ এক চূড়ান্ত অসম্মান।"

স্থানীয়রা বলছেন যে এই রাস্তায় একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির অফিস ছিল। তাঁরাই এই দেওয়ালের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছর আগেই অফিসটি সরে যায় এবং অযত্নে পড়ে থাকে এই শিল্প। রাজ্য পরিবহন বিভাগ এই দেওয়ালের মালিক কিন্তু দেওয়াল চিত্রিত করার বিষয়ে কিছুই ভাবেননি তাঁরা।

সরকারি সম্পত্তির ব্যবস্থাপক পি পট্টনায়েক বলেন, "এই দেওয়াল চিত্রটি খুব ফিকে হয়ে গিয়েছিল এবং প্রাচীর থেকে গাছ বেরিয়ে পড়েছিল। আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতেই হত। তাই প্লাস্টারিং এবং পেইন্টিং করা হয়েছিল। যদিও সিদ্ধান্তটি আমার ছিল না, তবে একটি উচ্চ স্তরে গৃহীত হয়।"

শানু লাহিড়ির পরমা মূর্তিটি নষ্ট হয়ে যায়নি, তা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে এই মূর্তি নামিয়ে বিশ্ববাংলার লোগো বসিয়ে দেয়। যার ‘স্রষ্টা' মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

 

a2bbknmo

 

প্রবীণ শিল্পী চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, "একটি বিশাল ভাস্কর্য ছিল। ম্যুরালের শীর্ষ অংশটি আঁকতে শিল্পীদের এর উপরে চাপতে হত!”

নন্দন চত্বরে রাজ্য সরকার সমর্থিত শিল্পমেলা ‘চরুকলা মেলা'য় তাঁর সৃষ্টি প্রদর্শন করছেন স্ব-প্রশিক্ষিত শিল্পী আয়োতি ঘোষ, পরমা তুলে নেওয়া আর দেওয়াল অঙ্কন মুছে ফেলা নিয়ে একটিই শব্দে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "অসহায়!"

শানু লাহিরীর মেয়ে দময়ন্তী লাহিড়ি বলেন, "অনেকেই বলছেন কেন এঁরা শানু লাহিড়িকেই লক্ষ্যবস্তু করছেন? আমি তাদের বলছি যে এঁরা তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করছেন না। আসলে পাবলিক আর্টের জন্য কোন স্থানই নেই। এটা সত্যিই দুঃখের। আসল শিল্পের বদলে কেন আমরা যত্রতত্র যা খুশি শিল্পের নামে চালিয়ে যাচ্ছি? কেন সবই কনভেয়র বেল্টের মতো হতে হবে!”

সন্তানকে কাছে পেতে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছেন শহরের এই দম্পতি

কলকাতার উপনগরী সল্টলেক শহরে "কনভেয়র বেল্ট আর্ট" অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুৎসিত ধূসর প্লাস্টিক পাস্টারের কাজ, যা ট্র্যাফিক রাউন্ডআউটগুলিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসানো।এবং নিউ ইয়র্ক সিটির রকার্ফেলার সেন্টারের সামনে অ্যাটলাসের ব্রোঞ্জ মূর্তির একটি খারাপ অনুকরণ ছাড়া একে বিশেষ কিছুই বলা যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শহরের অনেক প্রবীণ শিল্পীরা বলেন, “রাজনীতিই এখন সবার উপরে এবং পাবলিক আর্টের জন্য কোনও নীতিই নেই। এই শহরটিতে ইদানীং স্থাপন করা মূর্তিগুলি অনান্দনিক এবং শহরের জন্য বেশ বিব্রতকর!”

.