চারদিন গিরিরাজপ্রাসাদ আলো করে এসেছিল শিবের ঘরনী উমা, পার্বতী
কলকাতা: নবমীর রাত থেকেই বাদ্যির সুরটা বেসুরো বাজছিল। ঢাকের আওয়াজ যেন বিলাপ করছিল, “ওগো নবমীর নিশি আর পোহাইয়ো না”। সকাল হলেই যে গিরিরাজপ্রাসাদ শূন্য করে দিয়ে আবার কৈলাশে ফিরে যাবে উমা। আবার আসবে একবছর পর। চারদিন গিরিরাজপ্রাসাদ আলো করে এসেছিল শিবের ঘরনী উমা, পার্বতী। এই চারটে দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে মা মেনকা। নবমীর বিকেল থেকেই বুকের ভিতরটা থেকে থেকে কেমন যেন ডুকরে উঠছিল মেনকার। মেয়েকে বিদায় দেওয়ার লগ্ন যেন আর একটু পিছিয়ে যায়, করজোড়ে দেবী উষার কাছে প্রার্থনা করছিল মা মেনকা।
এক বছরের অপেক্ষা, চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে দশমীর সিঁদুর খেলায় বাগবাজার সার্বজনীন
রাজপ্রাসাদের ঝলমলে আলোতেও নবমীর রাতটা মা মেনকার কাছে কেমন যেন বিষাদের। একবছর পর মেয়ে আসে মাত্র তিন দিনের জন্য, মায়ের মন, মেয়েকে কিছুতেই বিদায় দিতে চায় না যে। দেবী উষাও আজ যেন মেনকার পরম শত্রু।
রাজার মেয়ে পার্বতী, ঘর বেঁধেছে কৈলাশে, শ্মশানচারী শিবের ঘরনী উমা, স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। ফিরে যেতে হবে কৈলাশে, সেখানে অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে শিব। মন খারাপ উমারও। চোখের কোন মাঝে মধ্যেই ভিজে উঠেছে, মনকে শক্ত করে রেখেছিল উমা।
দুর্গাপুজোয় কেন বাজবে আজান? বেলেঘাটার পুজো নিয়ে প্রশ্ন তুলল হিন্দু জাগরণ মঞ্চ
নবমীর রাত থেকেই একে অপরের দিকে তাকাতে পারেনি মা ও মেয়ে। তিনদিনের কথকথা, কত গল্প, কথা আনন্দ, হুইহুল্লোড়। নবমীর নিশি পোয়ালেই সব শেষ। কন্যা-বিদায়। সকালে কোনওমতে স্নান, খাওয়া সেরেই এবার বিদায়ের পালা উমার।
সম্প্রীতির বার্তা, শহরের কুমারি পুজোয় কুমারীরূপে মুসলিম কন্যা, দেখুন ভিডিও:
রাজকন্যা উমা, রাজরাণীর বেশে হিমালয় ও মেনকাকে বিদায় জানানোর ক্ষণ উপস্থিত। আর কিছুক্ষণ পরেই কনকাঞ্জলি। আগে চলেছে উমা, পিছনে মা মেনকা, সঙ্গে মন্ত্রী, সান্ত্রী, লোক, পাইক পেয়াদা সবাই। গিরিরাজের আলয় শূন্য হয়ে আসছে, ধীরে ধীরে, পায়ে পায়ে উমা পাড়ি দিচ্ছে কৈলাশে। মা, মেয়ের চোখের জলে সিক্ত হচ্ছে গিরিরাজের সিংহদুয়ারের পথ। সিংদুয়ারে গিয়ে কনঞ্জালি দিতে প্রস্তুত গিরিরাজকন্যা।
কনকাঞ্জলি দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল মা মেনকা। উমা পাড়ি দিল কৈলাশ। তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইল মেনকা, গিরিরাজ। রাজপ্রাসাদ যেন তাকিয়ে রয়েছে, খাঁ, খাঁ করছে পুরো হিমালয়প্রাসাদ। চোখের জলে ভাঙা গলায় মায়ের আর্তি, ভাল থাকিস মা, আবার আসিস।