বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর আলাদাই আবেদন। সেই কারণেই দেশের দুর্গম প্রান্তে হোক বা বিদেশ বিভুঁইয়ে, যেখানেই কয়েক ঘর বাঙালি এক সঙ্গে রয়েছে সেখানে তারা দুর্গাপুজোর আয়োজন করবেনই। এ বছরেও ১৪ অক্টোবর পঞ্চমীর দিন পুজো শুরু হবে, চলবে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত। নাম মাহাত্ম্যেই বোঝা যায় দুর্গাপুজো আসলে মা দুর্গার আরাধনা। কথিত রয়েছে পুরুষ দেবতারা সকলে মিলেও মহিষাসুরকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না কিছুতেই। তখন তারা মা দুর্গার শরনাপন্ন হন এবং পুরাণ অনুযায়ী বেশ কিছু দিন ধরে চলে দুর্গা ও মহিষাসুরের যুদ্ধ। শেষে তাকে পরাস্ত করে দুর্গা আখ্যায়িত হন মহিষাসুরমর্দিনী নামে।
দুর্গাপুজো 2018: পুজো কখন?
পুজোর দিন | পুজোর তিথি |
---|
১৪ অক্টোবর ২০১৮ | পঞ্চমী |
১৫ অক্টোবর ২০১৮ | ষষ্ঠী |
১৬ অক্টোবর ২০১৮ | সপ্তমী |
১৭ অক্টোবর ২০১৮ | অষ্টমী |
১৮ অক্টোবর ২০১৮ | নবমী |
দুর্গাপুজো ২০১৮: তাৎপর্য:
দুর্গা অসুরের যুদ্ধ আসলে শুভ শক্তির হাতে অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। মহিষাসুর দীর্ঘ তপস্যার পরে ব্রহ্মার কাছে অমরত্বের বর প্রার্থনা করে। ব্রহ্মা অবতীর্ন হয়ে বলেন, কোনও ত্রিলোকের কোনও পুরুষ তোমায় বধ করতে পারবে না। তা সম্ভব শুধু নারীর হাতে। মহিষাসুর এর পরে নিজেকে অমর ভাবতে শুরু করে। ত্রিলোকের দেবতা ঋষিদের উপরে অত্যাচার শুরু করে। দেবতারা তখন শক্তির আরাধনা করেন, প্রকাশিত হন দেবী দুর্গা। তিনি দশ দেবতার থেকে দশটি অস্ত্র লাভ করে রণসাজে মহিষাসুরকে যুদ্ধে আহ্বান করেন এবং ত্রিশূল দিয়ে তাকে বধ করেন।
যে কোনও বাঙালিকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি বলবেন এটা শুধু পুজো নয় তাদের কাছে উৎসব। বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তার প্রস্তুতি। পটুয়াপাড়ায় চলে মাটির প্রতিমা তৈরির কাজ। পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ তৈরি শুরু হয়ে যায়। ইদানীং দুর্গাপুজোয় থিম-যুদ্ধ প্রবল। অনেকে পুরস্কারও পান ভাল মণ্ডপ প্রতিমা ক্যাটেগোরিতে। মানুষজন নতুন জামা, গয়না কেনে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতা চলে মণ্ডপে মণ্ডপে। আর এত রকমের খাবারের দোকান বসে যা প্রায় অকল্পনীয়।
দুর্গাপুজো শুধু বাড়ির পুজো নয় বরং সামাজিক অনুষ্ঠান। ১৭-১৮ শতকের বাংলায় জমিদারেরা এর প্রচলন করেন। জাঁকজমকের সঙ্গে পুজো করে গোটা পাড়াকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসতেন তারা। কলকাতার কিছু তেমন বিখ্যাত পুজো আজও বহমান, আটচালা পুজো, শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো খুবই বিখ্যাত। পুজো মণ্ডপে শ্রেণি বৈষম্য মুছে যায়। ভোগের প্রসাদ পাতে পেয়ে সকলেই বলে ওঠেন ‘জয় মা দুর্গা।’