পেশায় সাংবাদিক কলকাতার এই যুবককে কিছুকাল আগেও লোক দেখলেই কথা বলার ভয়ে মুখে পান ভরে ফেলতে হত
কলকাতা: সিনেমার দুনিয়ার সকলই হয়। সেখানে দুর্দান্ত সুপুরুষ নায়ক খুঁড়িয়ে চলেন, সেখানে মিষ্টি নায়িকা কথা বলতে গিয়ে আটকান…. এসমস্ত ঘটনায় কেউ তেমন ভ্রূ কোঁচকান না, ঠাট্টা-তামাশাও করেন না। রিল আর রিয়েলের ফাঁদে পড়ে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের গল্প গুলো যন্ত্রণা থেকে বিশেষ উত্তীর্ণ হতে পারে না। কেউ কেউ পারেন, যেমন পেরেছেন প্রিয়ম সেনগুপ্ত। অথচ পেশায় সাংবাদিক কলকাতার এই যুবককে কিছুকাল আগেও লোক দেখলেই কথা বলার ভয়ে মুখে পান ভরে ফেলতে হত। এড়িয়ে যেত হত সম্ভাব্য সেই সমস্ত আড্ডা, সভা, পাড়ার ঠেক যেখানে আলোর কোনও ঠিকানা নেই, কেবলই তামাশা আর নিকৃষ্ট প্রমাণের উল্লাস।
কথা বলতে গিয়ে আটকে যেতেন প্রিয়ম। বারেবারেই কথায় হোঁচট খেতে খেতে ‘তোতলা’ শব্দটাই রোজনামচায় জুড়ে যায় তাঁর। তবে জুড়ে যাওয়া এই শব্দটিই অর্থ বদলে দিয়েছে তাঁর যাপনের। সম্প্রতি ‘জোশ টকে’র একটি মোটিভেশনাল শো’তে নিজের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন প্রিয়ম। ভিডিওটি ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে বেশ ভাইরাল হয়ে উঠেছে। জিনঘটিত কারণেই ছোটবেলা থেকেই কথা বলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তবে এই সমস্যার চেয়েও তাঁর কাছে তীব্র হয়ে দেখা দেয় ডিপ্রেশন। শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক, কোনও বিশেষ না-পারাকে নিয়ে ক্রমাগত মস্করা, বা নীচু করা থেকে গভীর মানসিক চাপ তৈরি হয়। বাড়তে থাকা চাপ আর কারও সঙ্গে যন্ত্রণা ভাগ করতে না পারার দ্বন্দ্বে অনেকেই আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। প্রিয়মের কথায়, স্কুলে সময়ের একটা বড় অংশ কাটায় শিশুরা। সেখানেই শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে যাতে অন্য কোনও শিশুর কোনও ‘খামতি’ অন্য বাচ্চাদের মজার রসদ না হয়ে ওঠে। এগুলি যে আসলে কোনও সমস্যা নয়, কোনও অপরাধ নয় তা ভুক্তভোগীকে যেমন বোঝাতে হবে, বোঝাতে হবে অন্য পড়ুয়াদেরও। স্কুলে স্কুলে বিশেষ কাউন্সেলিং মারফত বিষয়গুলি কম বয়সেই আটকানো গেলে আরেকটু ভালো ভবিষ্যৎ আশা করাই যেতে পারে।
তবে স্রেফ স্কুলেই নয়। প্রিয়ম বলেন, “অন্যের না পারা নিয়ে ট্রোল করা এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেব থেকে শুরু করে আম্বানির সন্তান সকলের শারীরিক কিছু অসুবিধা নিয়ে মজা করতে ব্যস্ত সোশ্যাল মিডিয়া। এই সময়ের এত শক্তিশালী মিডিয়াতে এই চিন্তার বিকল্প শক্তিও গড়ে তুলতে হবে। এই ধরণের ট্রোল বন্ধ করতে পালটা কথা বলতে হবে।” প্রিয়ম বলেন, “বহু সিনেমায় আমরা দেখি কথা আটকে যাচ্ছে এমন কোনও চরিত্রকে কেবলই মজা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সিনেমার সৃজনশীল মানুষদের এই অভ্যাস বদলাতে হবে।” নিজের জেদ আর অদম্য ইচ্ছাতেই মানসিক চাপ কাটিয়েছেন প্রিয়ম, কথা বলার বিষয়েও জড়তা কাটাতে চেষ্টা জারি রয়েছে এখনও। তবে স্কুলের পাশাপাশি বাবা মায়েদেরও অনেকখানি দায়িত্ব দিচ্ছেন সাংবাদিক প্রিয়ম। “জিনের কারণে কারও চুল সোজা হয়, কারও কোঁকড়ানো, সেটা নিয়ে আমরা যদি খিল্লি না করি কেন কারও তোতলানো, বা অন্য বিষয়কে ‘সমস্যা’ বলে দেখব। বাড়ি থেকেই সঠিক দিশা তৈরি হোক।” লড়াই শব্দ থেকেই অনুপ্রেরণা শব্দটিরও জন্ম হয়। যেমনভাবে প্রিয়ম, তাঁর চাকরি, তাঁর ‘ব্লাডমেটস’ দল অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‘সমস্যা’ নিয়ে বাঁচতে থাকা, মস্করার চরিত্রে অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত এমন অনেক মানুষ একদিন ঠিক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবেন, বিশ্বাস প্রিয়মের।
Click for more
trending news