উত্তরপ্রদেশের পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্যের সমালোচনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর।
লখনউ: কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখভি জানিয়েছেন, মীরাটের (Meerut) ঘটনার ভিডিওতে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) যে পুলিশকর্মীকে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে হওয়া সহিংস বিক্ষোভের মোকাবিলা করার সময় ওই পুলিশকর্মী মন্তব্যটি করেন। NDTV-র পাওয়া মোবাইল ফোন ভিডিওতে মীরাটের পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট অখিলেশ নারায়ণ সিংহকে দুই ব্যক্তি বলতে শোনা যায়, ‘‘পাকিস্তানে চলে যাও।'' সংবাদ সংস্থা এএনআইকে মুখতার আব্বাস নাখভি বলেন, ‘‘ভিডিওতে যা শোনা গিয়েছে, যদি সত্যিই সেই মন্তব্য তিনি করে থাকেন তাহলে তা নিন্দনীয়। ওঁর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।''
তিনি আরও বলেন, ‘‘পুলিশ বা জনতা, হিংসা যেই ছড়াক সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। পুলিশের দেখা উচিত, যাঁরা নিরপরাধ তাঁদের যেন কোনও ভাবে ভুগতে না হয়।''
ভিডিওতে পুলিশ আধিকারিক অখিলেশ নারায়ণ সিংহকে দেখা গিয়েছে একটি সরু গলিতে দাঙ্গা-নিরোধক পোশাক পরে হেঁটে আসতে। তাঁর সঙ্গে অন্য পুলিশকর্মীদেরও হেঁটে আসতে দেখা গিয়েছে। দেখা যায়, তিনি এক জায়গায় থেমে যান। সেখানে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তি দাঁড়িয়েছিলেন। অখিলেশকে সেখানে দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়, তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন। উত্তরে একজন জানান, তাঁরা এখনই নমাজ পড়ে আসছেন।
তখন অখিলেশ বলেন, ‘‘সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এই কালো ও নীল ব্যাজ পরেছে যারা, তাদের পাকিস্তানে চলে যেতে বলো।'' তিনি আরও বলেন, ‘‘তোমরা এখানে থাকতে না চাইলে চলে যাও। তোমরা এখানে থাকবে আর অন্য জায়গার প্রশংসা করবে!''
এরপর তাঁরা সেখান থেকে চলে যেতে গেলেও অখিলেশকে অন্তত তিনবার ফিরে এসে ওই লোকগুলিকে বলতে শোনায় যায়, ‘‘আমি সকলকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে জেলে নিয়ে যাব। আমি সকলকে ধ্বংস করে দেব।''
মীরাটের পুলিশ জানিয়েছে, তারা গত শুক্রবার প্রবল সহিংস বিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের পাথর ছুড়ে মারা হয় বলে জানিয়েছে তারা। এদিনের ছ'টি মৃত্যুর ঘটনা ধরলে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে হওয়া মৃত্যুর নিরিখে সারা দেশের সব রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ।
অধিকাংশেরই মৃত্যু গুলিবিদ্ধ হয়ে হলেও, মীরাটের পুলিশ জানিয়েছে, তারা গুলি চালায়নি। তাদের প্রকাশ করা ভিডিওয় দেখা গিয়েছে অন্য দিক থেকে মুখোশধারী প্রতিবাদীরা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে পুলিশের উদ্দেশে গুলি চালাচ্ছে।
শনিবার ওই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পরে অখিলেশ জানান, কিছু ব্যক্তি তাঁদের দেখে পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিল। পরে তারা গলির মধ্যে পালিয়ে যায়।
অখিলেশের সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকের মতে, অখিলেশের শব্দচয়ন আরও ভাল হতে পারত। মীরাটের অতিরিক্ত ডিজিপি প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, ‘‘ভারত-বিরোধী স্লোগান তোলা হচ্ছিল। কিছু ব্যক্তি আপত্তিজনক ইস্তেহার বিলি করছিল। উনি (অখিলেশ নারায়ণ সিংহ) সেখানে গিয়ে বলেন, তোমরা যেখানে খুশি যেতে পারো, কিন্তু ধ্বংস কোরো না।''
তিনি আরও বলেন, ওইদিনের পরিস্থিতি বেশ স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছিল। অন্যথায় পুলিশ এমন শব্দচয়ন করত না। তিনি আরও দাবি করেন, পুলিশ ওই বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছে এবং বাকিদের কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।
(তথ্যসূত্র: এএনআই)