This Article is From Apr 07, 2019

চা-শ্রমিকদের দুরবস্থাই কি নির্নায়ক হয়ে উঠবে আলিপুরদুয়ারের নির্বাচনে?

এবারও তৃণমূল বিজেপি এবং আরএসপি ছাড়া কংগ্রেস এসইউসিআই এবং দু'জন নির্দল প্রার্থী ওই আসন থেকে লড়াই করবেন।

চা-শ্রমিকদের দুরবস্থাই কি নির্নায়ক হয়ে উঠবে আলিপুরদুয়ারের নির্বাচনে?

কত ভোট এল গেল। চা শ্রমিকদের অবস্থা একই রয়ে গেল! (ফাইল চিত্র)

ভুটানের পাহাড়ি অঞ্চলের ঠিক নিচে উত্তর বাংলার ডুয়ার্স অঞ্চল। সেখানকার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র। এই অঞ্চল মূলত চা বাগান এবং নদী ঘেরা। এ বছর সেই অঞ্চল মূলত তৃণমূল এবং বিজেপির লড়াই দেখবে। এই কেন্দ্রটি সিডিউল ট্রাইবদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশই আদিবাসী। যারা ব্রিটিশ আমলে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের খোঁজে চা বাগানে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। এছাড়াও এখানে বসবাস বেশ কিছু নেপালি এবং রাজবংশী উপজাতির। চা বাগানের কর্মীদের দুরবস্থার কথা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সংস্থার তরফে বলা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ভাগে ১১ই এপ্রিল এই কেন্দ্রের ভোটে সেই চা বাগানের কর্মীদের দুরবস্থাই হয়তো একটা বড় ভূমিকা নিতে চলেছে।

১৯৯০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চা-কর্মীরা ও তাদের পরিবার ক্রমাগত প্রতিকূল পরিবেশে সম্মুখীন হয়েছেন। বেঁচে থাকার জন্য তাদের প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয়। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে টিএমসি, বিজেপি এবং বামফ্রন্ট্রের সহযোগী দল আরএসপি প্রায় পরস্পরের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এই এলাকায় বাম ভিত্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
এই অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি দশরথ তিরকে-কেই পুনরায় নমিনেশন দিয়েছে দল। তিনি দাবি করেছেন, আলিপুরদুয়ারের ৬৫টি চা বাগানের মধ্যে ১৫টি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার চেষ্টায় ১৩টি পুনরায় খুলেছে আর দুটি বাগান খোলানো বাকি।

মোদীকে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী করতে পারবে না বিজেপিঃ শরদ পাওয়ার

বিজেপির প্রার্থী জন বারলা দাবি করেছেন, চা বাগানের কর্মীরা ক্রমাগত কন্ট্রাক্টারদের শোষণের শিকার হচ্ছেন এবং অত্যন্ত কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বারলা বলেন, ‘‘একজন চা শ্রমিক প্রতিদিন ১৭৬ টাকা পান। অথচ সরকার থেকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে যে কোনও শ্রমিকের প্রতিদিনের ন্যূনতম মাইনে হবে ৩৫০। তিনি দাবি করেন, ‘‘কিছু কিছু চা বাগানে শ্রমিকদের দিনান্তে মাত্র ১৩২ টাকা দেওয়া হয়।'' বিজেপি প্রার্থীর দাবি, রাজ্য শ্রমিক দফতর চা বাগানের কর্মীদের নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায় না। তার আরও দাবি, এই কেন্দ্রের ৪৫ শতাংশ জনতাই আদিবাসী। কালচিনি এলাকার এক চা শ্রমিক সুমন রাই বললেন, ‘‘চা শ্রমিকদের অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সবাই আসে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা আর বাস্তবায়িত হয় না। বাম আমল থেকে আমরা দেখেছি, বহু নেতা এসে আমাদের সুদিনের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্মও তা দেখে উঠতে পারেনি।''

বারলার দাবি, ‘‘আমি ২০০৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করছি। লক্ষীপারা চা বাগানে কোয়ার্টারে আমার বাস।'' তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমান তৃণমূলের এমএলএ নিজে একজন আদিবাসী বলে দাবি করলেও আজ অবধি তিনি এখানকার আদিবাসীদের জন্য কিছুই করেননি।'' বাংলা বলেন, ‘‘আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমি ৪৫ দিন জেল খেটে এসেছি। এই আদিবাসীদের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ক্রমাগত ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।' বারলার অভিযোগ, যে দুটি চা বাগান বন্ধ হয়ে রয়েছে তার একটি বন্ধ হয়েছে ছ'মাস আগে অন্যটি দু'বছর আগে। কিন্তু তিরকে একবারও কোনওটিতেই এসে দেখা করেননি।

তিরকের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘এই অঞ্চলে যদি বারলা উন্নয়ন দেখতে না পান, তা হলে ওর চোখে ছানি পড়েছে।'' তিনি বলেন গত ৫ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ারে দু'হাত ভরে দিয়েছেন। সেই কারণেই আলিপুরদুয়ার সাব ডিভিশন থেকে জেলায় উন্নীত হয়েছে। এখানে মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হয়েছে। তবে প্রান্তিক এলাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন। 

"বিজেপিকে খুশি করার জন্যই করা হল",পুলিশকর্তা বদলি নিয়ে কমিশনকে চিঠি মমতার

মকারঘড়ি অঞ্চলের এক ছোট্ট ঝুপড়ির বাসিন্দা মিনতি ওঁরাও বলেন, ‘‘কলেজ হসপিটাল হয়েছে, তবে বর্ষার দিনে নদী উপচে পড়ে ফলে যোগাযোগের সমস্যা রয়েই যায়। তখন না পৌঁছয় চিকিৎসা পরিষেবা,  না শিশুরা স্কুলে যেতে পারে।''

তোর্সা, কালচিনি, রায়ডাক, জয়ন্তী এবং শোঙ্কাসা এই পাঁচটি মুখ্য নদী ছাড়াও অজস্র ছোট নদী এবং তাদের শাখানদী-উপনদী আলিপুরদুয়ার দিয়ে বয়ে গিয়েছে। ১৯৭৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রটি ছিল বামেদের দখলে। এখানে তাদের জনভিত্তি ছিল প্রচুর। ২০১৪ সালে তিরকে আরএসপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করেন। সে বার তিনি ২১ হাজার ৩৯৭ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী আরএসপি প্রার্থীকে হারিয়ে দেন। 

এবারও তৃণমূল বিজেপি এবং আরএসপি ছাড়া কংগ্রেস এসইউসিআই এবং দু'জন নির্দল প্রার্থী ওই আসন থেকে লড়াই করবেন।



(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)
.