মেন্ডোন্সা (George Mendonsa) এই আকস্মিক চুম্বনকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এটা এক মুহূর্তের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা
দিনটা ১৪ আগস্ট, ১৯৪৫। জাপান আত্মসমর্পণ ঘোষণা করেছে। জর্জ মেন্ডোন্সা রেডিও সিটি মিউজিক হল থেকে বেরিয়ে আসেন। বেরিয়েই টাইমস স্কোয়ারে কাছাকাছি একটি বারে যান। নৌবাহিনীর এই কোয়ার্টার মাস্টার জর্জ সেই সময় ছুটিতে রয়েছেন। বেশ কয়েক পেগ মদে নেশা যখন আলতো ঝিম ধরাচ্ছে বার থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন জর্জ মেন্ডোসা। পরণে নৌবাহিনীর পোশাক। রাস্তায় হঠাৎ তাঁর চোখ যায় নার্সের পোশাকে এক যুবতীর দিকে। হালকা ঘোরে তাঁর মনে পড়ে যায় সমুদ্রবক্ষে আহত কমরেডদের যত্ন নেওয়া সেই সমস্ত নার্সদের মুখচ্ছবি। জর্জ ওই নার্সের পিঠে হাত রাখেন, নিমেষে গভীর চুম্বনে ডুবে যান।
প্রকাশ্য রাস্তায় আচমকা চুম্বনের এই দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেন এক ফটোগ্রাফার আলফ্রেড আইজেনস্টেডট। তখনও তিনি জানতেন না ২০ শতকের সবচেয়ে স্মরণীয় চিত্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠবে এই চুম্বনের ছবিটিই। এই ছবিটি চিত্রসাংবাদিকতাকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করে। আনুষ্ঠানিকভাবে “ভি জে ডে ইন টাইমস স্কোয়ার' এবং ‘দ্য কিস' নামে পরিচিত এই ছবিটি লাইফ ল্যাগাজিনে ওই ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়।
অপপ্রচারের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘকে ব্যবহার করছে পাকিস্তান, কুলভূষণের মামলায় সওয়াল ভারতের
যদিও আইজেনস্টেডট নিজে জানতেনও না এই ছবির চুম্বনরত দুই চরিত্রের নাম আসলে কী? তবে ডানবাহুতে ট্যাটু, বাঁদিকের মুখমণ্ডলের নানা মিল দেখে অনেককাল পরে মেন্ডোন্সাকেই ওই ছবির পুরুষ চরিত্র বলে মেনে নেওয়া হত। পরে আবার মেন্ডোসার স্ত্রীর কাছ থেকে নানা তথ্য নিয়ে, সফ্টওয়্যার দ্বারা বিশ্লেষণ করে প্রমাণ হয় যে নাবিক জর্জ মেন্ডোসাই ওই চুম্বনরত পুরুষ।
গত রোববার, ৯৫ বছর বয়সে রোহড আইল্যান্ডের নিউপোর্টে মারা যান এই নাবিক। তার ঠিক দু'দিন আগেই ছিল তাঁর জন্মদিন। হৃদরোগে ভুগছিলেন জর্জ মেন্ডোসা, জানান তাঁর বন্ধু জেরি ও'ডোনেল।
অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকা পাকিস্তানে ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রস্তাব দিল সৌদি আরব
বহু বছর ধরেই মনে করা হত চুম্বনরত দ্বিতীয় চরিত্রটি, অর্থাৎ ওই নার্স হলেন এডিথ শাইন। ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালের কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০১০ সালেই মারা গিয়েছেন শাইন। তবে ওই ছবি অনুসারে, ছবির নারীর চেয়ে শাইনের উচ্চতা অনেক বেশি ছিল, শারীরিক গঠন এবং চুলের স্টাইলও ছিল আলাদা। তবে ভেরিয়া এবং নৌবাহিনীর বিমানচালক জর্জ গলদরিসির লেখা ‘দ্য কিসিং সেলর' বইতে তাঁরা জানিয়েছেন, এই চুম্বনরত মহিলা আসলে অস্ট্রিয়ার জন্মগ্রহণকারী হোলোকাস্ট শরণার্থী গ্রেটা জিমমার ফ্রিডম্যান। তিনি দাঁতের চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন কিন্তু নার্সের সাদা ইউনিফর্ম পরেছিলেন।
মেন্ডোন্সা প্রায়ই তাঁর এই আকস্মিক চুম্বনকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এটা এক মুহূর্তের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে নৌবাহিনী থেকে ছুটি হয়ে যায় তাঁর। মাছ ধরার কাজে ফিরে আসেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে চুম্বনকারী নাবিক হিসাবে স্বীকৃতি চেয়ে লাইফ ম্যাগাজিনের সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯৮০-এর দশকে তিনি এই মামলা প্রত্যাহার করেন। তারপরে, তাঁর সেই একদিনের চুম্বনের সহযাত্রী গ্রেটা ফ্রিডম্যানের সঙ্গে যোগাযোগও হয়, বন্ধুত্বও। প্রতি বছর ক্রিসমাসে এঁকে অন্যকে কার্ড পাঠাতেন তাঁরা।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)