বিল গেটসকে এক মহিলা জানিয়েছিলেন কীভাবে তিনি তাঁর হাইস্কুলে পড়া মেয়ের কাছ থেকে নিজের যৌনকর্মী পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন
নিউ দিল্লি: গেটস ফাউন্ডেশনের এডস প্রতিরোধ প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ভারতে বহুবারই এসেছেন বিল গেটস। তাঁর তেমনই একটি ভ্রমণে বিল গেটস এক যৌনকর্মীর জীবনের গল্প শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন সকলের সামনেই। মা যৌনকর্মী জানার পর সহপাঠীদের দ্বারা মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিল তাঁর একমাত্র কন্যা।
১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গেটস ফাউন্ডেশনের এইচআইভি / এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন অশোক আলেকজান্ডার, তাঁর "আ স্ট্রেঞ্জার ট্রুথ: লেসনস ইন লাভ, লিডারশিপ অ্যান্ড কারেজ ফ্রম ইন্ডিয়া'জ সেক্স ওয়ার্কার্স" বইটিতে এই কথা লিখেছেন তিনি। দেশের যৌনকর্মীদের সম্পর্কেই কথা বলেছেন অশোক। কীভাবে এই কর্মীদের জীবন থেকে নেতৃত্ব ও দক্ষতা শেখা যায়, কীভাবেই বা ভারত এইডস মহামারী রুখতে উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাও লিখেছেন আলেকজান্ডার।
লেখক ভারতে যৌনকর্মীদের জীবনের সত্য কাহিনী উল্লেখ করেছেন। হতাশা এবং হতাশার মধ্যে স্বপ্ন এবং মুক্তির সন্ধানের সফরের কথা লেখা আছে ছত্রে ছত্রে। লেখক জানিয়েছেন, “ বিল ও মেলিন্ডা ভারতে এলে যৌন কর্মীদের বিষয়েই কেবল কাজ করে যেতেন। ছোট গোল করে বসত যৌনকর্মীরা, মেলিন্ডা ও বিল তাঁদের সামনে। মেলিন্ডা তাঁদের জীবনের গল্প শুনতে চাইতেন। বেশিরভাগ গল্পই দুঃখের- প্রত্যাখ্যান, চূড়ান্ত দারিদ্র্য এবং একটা সময় এসবের শেষ হয়ে স্বপ্নের উত্তরণ। প্রতিটা গল্পই নিষ্ঠুরভাবে সত্য।"
গল্পগুলির একটিতে ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে বিল গেটসের ভারত ভ্রমণের সময় ঘটা একটি ঘটনাও রয়েছে। বিল গেটসকে এক মহিলা জানিয়েছিলেন কীভাবে তিনি তাঁর হাইস্কুলে পড়া মেয়ের কাছ থেকে নিজের যৌনকর্মী পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন। যখন তাঁর সহপাঠীরা এই সত্য জানতে পারে মেয়েটিকে ক্রমাগত মানসিকভাবে অত্যাচার করতে থাকে তাঁরা, নানা কুকথা, অপমান এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে গভীর বিষ্ণণতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে মেয়েটি।
"একদিন তাঁর মা বাড়ি ঢুকেই দেখেন ছাদের ফ্যান থেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে তাঁর একমাত্র কন্যা। নীচে মেঝেয় উড়ে বেড়াচ্ছে হাতে লেখা চিরকূট। ‘আর নিতে পারছি না' এই ক'খানা শব্দ লিখেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিয়েছে যৌনকর্মী মায়ের মেয়ে। আমি লক্ষ্য করেছি যে, আমার পাশে বসে বিল মাথা নিচু করে বসে আছেন, কাঁদছেন নিশ্চুপে।" জগ্নার্নট প্রকাশিত বইয়ে এমনই লিখেছেন আলেকজান্ডার।
আলেকজান্ডার ২০০৩ সালে হাই প্রোফাইল কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে আবাহনের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। আপাত শান্তি ও সুখের জীবন স্বেচ্ছায় ছেড়ে এমন এক ভারতবর্ষের কাজে নেমে পড়েন রোজ, যেখানে সুখ নেই হয়ত, কিন্তু উত্তরণের গল্প কোথাও না কোথাও গড়ে ওঠে রোজ।
ভারতবর্ষ এমন এক জায়গা যেখানে মহিলারা এখনও নিজেদের ৫০ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয়ে যান। ১৪ বছরের তরতাজা প্রাণ স্নায়ুর মধ্যে ড্রাগ মিশিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। ভারত এমন এক দেশ যেখানে কিছু দিন আগে অব্দি সমকামকে অপ্রাধ বলেই দেখে এসছি আমরা। রূপান্তরকামীতা এখনও এখানে মানুষের মস্করার সহজলভ্য বিষয়। আর এই ভারতবর্ষের প্রাচীন রাস্তাঘাট পেরিয়েই এখনও প্রতিটা মানুষ সুস্থ হয়ে, সুন্দর জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে। বুকে স্বপ্ন নিয়ে লড়তে নামে রোজ। হারে, আবার ঠিক জিতে যায় একদিন।
আরও খবর পড়ুন এখানে
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)