Unnao case: বৃহস্পতিবার ওই তরুণীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলে ৯০ শতাংশ পুড়ে যায় তাঁর
হাইলাইটস
- "ওদের গুলি করে মারা উচিত", বললেন উন্নাওয়ের মৃত তরুণীর বাবা
- ওই তরুণীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে মারার চেষ্টা করে ৫ অভিযুক্ত
- দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় নিগৃহীতার
নয়া দিল্লি: তেলেঙ্গানা ধর্ষণ কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরও এক ধর্ষিতাকে (Unnao case) মেরে ফেলা হল। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে এক তরুণীকে বৃহস্পতিবার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় কয়েকজন। জানা গেছে, যাঁরা ওই মেয়েটির গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তাঁদের মধ্যে সেই ২ জনও ছিল যাঁদের বিরুদ্ধে ওই নিগৃহীতা ধর্ষণের (Unnao Rape case) অভিযোগ করেছিলেন। শুক্রবার গভীর রাতে দিল্লির হাসপাতালে ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। মেয়ের মৃত্যুতে চোখের জল হয়তো কোনওদিনই শুকোবে না তাঁর বাবার, কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছেন। তিনি পরিষ্কার জানান, যে ৫ অভিযুক্ত তাঁর মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করল তাঁদেরকেও গুলি করে মেরে ফেলা হোক, একদম হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের মতো।
"আমি সরকার ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেবলমাত্র এটাই চাই যে হয় দোষীদের ফাঁসি দেওয়া হোক অথবা তাঁদের ঠিক হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের মতো গুলি করে হত্যা করা হোকI আমি লোভী নই। আমি কোনও কিছু চাই না, বাড়ি তৈরি করতে চাই না। আমি শুধু চাই ওদের শাস্তি হোক", বলেন মৃত তরুণীর বাবা। "আমার মেয়ে রায়বরেলিতে যাওয়ার জন্য একাই ট্রেন ধরতে যাচ্ছিল", বলেন তিনি।
মহিলার ভাই বলেন যে তাঁর বোন তাঁকে বলেন যে তিনি "ওই পুরুষদের মৃত অবস্থায় দেখতে" চান। "আমার বোন বলেছিলো, 'দয়া করে আমাকে বাঁচাও, আমি ওদের মৃত দেখতে চাই'। আমি বলেছিলাম আমরা ওকে বাঁচাব। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। আমার বোন আর নেই এবং আমিও চাই ওই ৫ জনের আর বাঁচা উচিত নয়। এটাই আমরা আশা করি", বলেন মৃতার ভাই।
ধর্ষিতার গায়ে আগুন লাগিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, মারা গেলেন উন্নাওয়ের নিগৃহীতা
গত বৃহস্পতিবার উন্নাওয়ের সেই নিগৃহীতা যখন আদালতে যাচ্ছিলেন, সেই সময়েই তাঁর উপর হামলা করে ৫ অভিযুক্ত। তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে ঘটনাস্থলেই মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় তাঁকে। ৯০ শতাংশ পুড়ে যান ওই ধর্ষিতা, আশঙ্কাজনক অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ নাগাদ হাসপাতালেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
অথচ ভয়ঙ্কর ভাবে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর তাঁকে প্রাণে বাঁচাতে উত্তরপ্রদেশ থেকে আকাশপথে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করা হয় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে। সফদরজং হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান (বার্নস অ্যান্ড প্লাস্টিক) ডঃ শলভ কুমার বলেন, "রাত ১১ টা ১০ নাগাদ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং আমরা তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি এবং রাত ১১:৪০ মিনিটে মারা যান তিনি।"
তবে মারা যাওয়ার আগে ওই মহিলা পুলিশকে জানান যে উন্নাওয়ে তাঁর গ্রামের কাছেই ধর্ষণে অভিযুক্ত ২ ব্যক্তি সহ মোট ৫ জন তাঁকে আক্রমণ করে। প্রথমে তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে তাঁরা, এমনকি ছুরির ঘায়ে ঘায়েল করারও চেষ্টা করা হয় তাঁকে। পরে তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। জানা গেছে, ওই ধর্ষিতা তাঁর দায়ের করা ধর্ষণের মামলার শুনানির জন্য়েই সেই দিন আদালতে যাচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে রেলস্টেশনের কাছে ঘিরে ফেলে ওই হামলা চালায় ৫ জন।
তবে নির্যাতিতা মারাত্মক ভাবে পুড়ে যাওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে নেওয়ার সময় পুরোপুরি সচেতন ছিলেন, সেখানেই তিনি পাঁচজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করে পুলিশকে একটি বিবৃতি দেন।
উন্নাওয়ের মহিলার মৃত্যু "অত্যন্ত দুঃখজনক", বললেন যোগী আদিত্যনাথ
"ভোর ৪টের সময় আমি স্থানীয় রেলস্টেশনে রায় বরেলি যাওয়ার জন্যে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলাম। সেই সময়েই ওই ৫ জন (তিনি নাম দিয়েছিলেন) আমার জন্য ওৎ পেতে অপেক্ষা করছিল। ওরা আমাকে ঘিরে ধরে প্রথমে লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং আমার ঘাড়ে ছুরি দিয়েও আঘাত করে। তারপর ওরা আমার গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়", উন্নাওয়ের হাসপাতালের বেডে শুয়ে পুলিশকে ওই বিবৃতি দেন নিগৃহীতা।
উন্নাওয়ের ধর্ষিতা তরুণী বলেন, "আমার চিৎকারে সেখানে লোক জড়ো হয় এবং তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন"।
হামলাকারীদের মধ্যে ছিল ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত শিবম ত্রিবেদীও, যাঁকে পাঁচ দিন আগে এই মামলায় জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ধর্ষণের আরেক অভিযুক্ত শুভম ত্রিবেদীও ওই হামলাকারীদের মধ্যে ছিল বলে জানা গেছে। ৫ জন হামলাকারীকেই তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দেখুন ভিডিও: