আগে এই আম খাওয়ার সুযোগ পেতো শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যরা
নিউ দিল্লি:
আজকের দিনে একটা কোহিতুর আমে খাওয়ার জন্য আপনাকে দিতে হবে 1,500 টাকা! হ্যাঁ সিরাজ উদ-দৌলার রাজত্বকালে শুধুমাত্র রাজবংশীয়রা যে আম খাওয়ার অধিকার পেতেন এবার সেই আমকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার জিআই তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
অষ্টাদশ শতকে নবাব জামানায় প্রথম আবির্ভাব হয় এই রাজকীয় আমের। আর এই আমের লালন পালনও হয় এক রাজার মতো। কারণ এই আম এতটাই সুক্ষ যে এটা কাটার সময় সেটা তুলোয় রেখে যত্ন সহকারে কাটা হয়, না হলে সেটা মুহূর্তের মধ্যে গলে যায়। বনের দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে সেই আম রাজমহলের অভ্যন্তরেই তৈরী করা হতো। আর সেই আম খাওয়ার সুযোগ পেতো শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যরা।
আর আজকের সময়ে নবাব ছাড়াও প্রচুর মানুষ এই আম কেনার ক্ষমতা রাখে তাই সেই কথা মাথায় রেখে মুর্শিদাবাদের এই নবাবী আমকে জিআই(জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) দেওয়ার চেষ্টা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদেই এই দুর্লভ প্রজাতির আম গাছ পাওয়া যায়। আর সব থেকে খারাপ বিষয় এটাই যে, প্রথমে এই ধরণের গাছের সংখ্যা প্রথমে 148টি হলেও এখন সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে 42। আর পিটিআই-কে হর্টিকালচারের ডেপুটি ডিরেক্টর গৌতম রায় জানিয়েছেন, "আমরা এই বিশেষ এবং দুর্লভ আমকে ভৌগোলিক ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করছি"
আর এই তকমার ফলে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যবহারকারীরাই এই পণ্যের নাম ব্যবহার করতে পারবে।
এই মুহূর্তে দিল্লির জনপথে পশ্চিমবঙ্গের হর্টিকালচার দ্বারা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আম উৎসব। আর সেখানেই এই দুর্লভ আমে প্রদর্শিত হচ্ছে।
গৌতম রায় জানিয়েছেন, সিরাজ উদ-দৌলা আদতে একজন আমের বড় গবেষক ছিলেন। যিনি গোটা দেশ থেকে অনেক ধরণের আম গাছের চারা সংগ্রহ করে সেটা মুর্শিদাবাদে লালন পালন করতেন আর তাদের মিলিয়ে মিশিয়ে নতুন প্রজাতির আম গাছ তৈরী করতেন। এবং তার এই কাজে কিছু খাস লোকও নিয়োগ করেছিলেন, যারা আকবরের নবরত্ন হিসেবে সম্মান পেতো। আর সেই সময়ই তিনি কোহিতুর আম আবিষ্কার করেছিলেন।
মানুষের বিশ্বাস কোহিতুর আম সৃষ্টি হয় রাজ পরিবারের আম পালক হাকিম আদা মহাম্মাদি দ্বারা। যিনি কালাপাহাড় আমের সাথে অন্য এক ধরণের আমের সংমিশ্রনে তৈরী করেছিলেন এই দুর্লভ প্রজাতির আম।
যদিও কালচে সবুজ রঙের কালাপাহাড় আম এখন বিলুপ্ত এবং কোহিতুর এখনো টিকে আছে। কিন্তু সেই সংখ্যা দিন দিন কমেই চলছে।
আম বিক্রেতা আশাবুল মন্ডল জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে একটি মাত্র 10 থেকে 15 জন আম চাষি এই আম পালন করে। রাজ্য সরকারের অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই আম গাছের সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়ে প্রায় 20 থেকে 25। আর এই আম গাছদের বয়েস প্রায় 150 বছর। আর একটা মরসুমে 40টির বেশি আম পাওয়া যায় না।
তবে এই আমের দাম 500 টাকার ওপর বেড়ে যাওয়ার পর থেকে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবং কলকাতাতে এই আম 1500 টাকাতে বিক্রি করেছে তারা শেষ মরসুমে।
এই আম এতটাই সুক্ষ যে তাকে গাছ থেকে পেড়ে নেওয়ার পর সাবধানে তুলোর বাক্সে রাখতে হয়। তবে গাছ থেকে কোনো কারণে ছিঁড়ে পড়ে গেলে এই আম পুরো নস্ট হয়ে যায়। মেটালের ছুঁড়ি দিয়ে অন্য আম কাটা হলেও এই আম কাটা উচিত বাঁশের তৈরী ছুঁড়ি দিয়ে। নবাব খোদ এই আম খাওয়ার জন্য সোনার তৈরী কাঠি ব্যবহার করতেন।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে রত্নাগিরি ও দেবগড় আলফানসো আমকে জিআই ট্যাগ দিয়েছে।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)