সপ্তদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সরকার ১০টি অর্ডিন্যান্সকে আইনে রূপান্তরিত করতে চায়। যার অন্যতম ‘তিন তালাক’।
নয়াদিল্লি:
‘তিন তালাক’কে বেআইনি ঘোষণা করতে একটি নতুন বিল লোকসভায় পেশ করা হতে পারে শুক্রবার। আগের বিলটি সংসদের উচ্চ কক্ষে স্থগিত থাকায় পরে বাতিল হয়ে যায়। সেই বিলই পেশ করা হবে আবার। গত ফেব্রুয়ারিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র তরফে একটি অর্ডিন্যান্স ইস্যু করা হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকার সুরক্ষা) বিল ২০১৯ থেকে। সেটি রাজ্যসভায় পাস করা যায়নি। চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির ছয় সাংসদের চারজনই বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যার ফলে রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি সামান্য বাড়ল। রাজ্যসভায় ২৪৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ১০২টি আসন এনডিএ-র।
জেনে নিন এই বিলের ১০ টি বিশেষ তথ্য:
বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হলে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, সরকারের উচিত একটা অভিন্ন আইন আনা। কখনওই কেবল মুসলিম ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে নয়। শশী বলেন, ‘‘অন্য ধর্মের লোকরাও তাঁদের স্ত্রীদের ত্যাগ করেন। এই বিলে কোনও পদ্ধতিগত সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। কোনও স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো উচিত... এটা একটা পক্ষপাতমূলক বিল।''
ষষ্ঠদশ লোকসভা ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘তিন তালাক' বিলটি বাতিল হয়ে যায়, কেননা সেটি রাজ্যসভায় স্থগিত হয়ে ছিল।
গত ডিসেম্বরে লোকসভায় বিলটি পাস করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, কোনও মুসলিম ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক ভাবে ‘তালাক' শব্দটি উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ দিলে তাঁকে তিন বছরের জন্য কারাবাস করতে হবে।
কিন্তু বিলটি রাজ্যসভায় পাস হয়নি, কেননা সংসদের উচ্চ কক্ষে বিরোধীরাই সংখ্যাগুরু। বিরোধীরা বিলটি পরীক্ষার জন্য কোনও কমিটি গড়ে তাদের কাছে পাঠাতে চেয়েছিল। সরকার সেই দাবি খারিজ করে দেয়।
নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড, যারা এনডিএ-র জোটসঙ্গী, তারা জানিয়েছে, তাদের দল ‘তিন তালাক' বিলকে সমর্থন করবে না। জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দলও জানিয়েছে তারা বিলটির সমর্থন করতে চায় না।
কংগ্রেস-সহ বেশির ভাগ বিরোধী দল অভিযোগ করে এতে স্বামীকে জেলে পাঠানোর মতো কঠোর বিধান দেওয়া যায় না। তাদের যুক্তি, গার্হস্থ্য অশান্তিতে এভাবে শাস্তিদানের বিধান দেওয়া যায় না। তাদের দাবি, এতে মুসলিমদের চক্রান্তের শিকার হতে হবে।
সরকার উত্তরে জানিয়েছে, এই বিল মেয়েদের আক্রান্ত হওয়ার থেকে বাঁচাবে। তাঁদের সমানাধিকার দেবে। এই প্রস্তাবিত আইন লিঙ্গসাম্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই তৈরি করা হবে। এবং এটি সরকারের দর্শন ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস'-এরই অংশ।
সরকার একটি এগজিকিউটিভ অর্ডার পাস করে তিন তালাককে বেআইনি ঘোষণা করতে। এই বিলের দু'বার পুনর্নবীকরণ হয়। নতুন বিলটি সেই অর্ডিন্যান্সেরই কপি।
প্রস্তাবিত আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, তাই সরকার রক্ষাকবচ হিসেবে বিচার চলাকালীন প্রয়োজনমতো জমানত মঞ্জুরের ব্যবস্থাও রাখে।
সপ্তদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সরকার ১০টি অর্ডিন্যান্সকে আইনে রূপান্তরিত করতে চায়। যার অন্যতম ‘তিন তালাক'। এই অর্ডিন্যান্সগুলিকে অধিবেশন শুরুর ৪৫ দিনের মধ্যে আইনে রূপান্তরিত করতে হবে। অন্যথায় তা বাতিল হয়ে যাবে।
Post a comment