দেশের বৈচিত্র সম্পর্কে মৌলানা আজাদের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন মহুয়া।
হাইলাইটস
- তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সংসদে প্রথম ভাষণেই সাড়া ফেললেন।
- কৃষ্ণনগরের ৪২ বছরের সাংসদের বক্তৃতা টুইটারে জনপ্রিয় হয়েছে।
- মৌলানা আজাদের উদ্ধৃতিও দেন তিনি।
নয়াদিল্লি: তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নবনির্বাচিত সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) সংসদে (Parliament) তাঁর প্রথম ভাষণে দাবি করলেন, ভারতে ফ্যাসিজমের প্রতিটি চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণনগরের ৪২ বছরের সাংসদের বক্তৃতা টুইটার সহ সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়েছে। মার্কিন ইহুদি গণহত্যার স্মারক জাদুঘরের একটা পোস্টার দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা ইতিহাসের কোন অংশ হতে চাই... যে পক্ষ সংবিধানের সমর্থক নাকি যে পক্ষ হয়ে উঠেছে সংবিধানের শববাহক।'' প্রাক্তন মার্কিন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার মহুয়া বলেন, তিনি বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকে নম্রভাবে গ্রহণ করছেন। কিন্তু ভিন্নমত পোষণকারীর স্বরটাও শোনাটা জরুরি।
আরও ১ লক্ষ জনের নাম বাদ অসমের নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে, জুলাইয়ে চূড়ান্ত তালিকা
মহুয়া বলেন, ‘‘আপনারা বলতেই পারেন ‘আচ্ছে দিন' এসে গিয়েছে এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যের সূর্য যাতে কখনও অস্ত না যায় সরকার সেটাই চাইছে। কিন্তু তাহলে বলতে হয় আপনারা সঙ্কেতটা ধরতে পারছেন না। যদি আপনি চোখ খোলেন, তাহলে দেখবেন দেশের সর্বত্র চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে যা থেকে বোঝা যাচ্ছে দেশটা বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।''
আরও ১ লক্ষ জনের নাম বাদ অসমের নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে, জুলাইয়ে চূড়ান্ত তালিকা
তাঁর ‘চিহ্নের' তালিকায় রয়েছে ‘অগভীর' জাতীয়বাদ যা দেশের কাঠামোয় অসার। রয়েছে ‘মানবাধিকারের প্রবল অবমাননা', ভিন্নমতের অবদমন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং সরকার ও ধর্মের মিলেমিশে যাওয়া।
তিনি বলেন, ‘‘অগভীর, সংকীর্ণ ও বিদেশি-আতঙ্কে ভরা জাতীয়তাবাদ কখনওই একতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে না, ক্ষমতার লোভকেই করে।'' সরকারের অসমে নতুন নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মহুয়া বলেন, ‘‘যে দেশে নেতারা স্নাতক ডিগ্রি লাভের প্রমাণ দিতে পারেন না, আপনারা আশা করছেন সেদেশে গরিব, অধিকারচ্যুত মানুষেরা কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ দেবেন তাঁরা এদেশেরই মানুষ?'' মহুয়ার বক্তব্যে প্রচ্ছন্ন ছিল নরেন্দ্র মোদি ও সুষমা স্বরাজের প্রতি কটাক্ষ।
মহুয়ার ভাষণ চলাকালীন এনডিএ সাংসদরা চেঁচিয়ে প্রতিবাদ করলে ৪২ বছরের সাংসদ গর্জে উঠে জানিয়ে দেন, ‘‘স্যার, এই মহান হলের করিডরে পেশাদার অব জন্য কোনও ঘর নেই। আমার আর্জি, এই কক্ষের শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।''
দেশজুড়ে চলতে থাকা ঘৃণাজনিত অপরাধের কথা তুলে তিনি ‘‘পেহলু খান থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ডের গণপিটুনি''র প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। মহুয়া বলেন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়কালে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে ঘৃণাজনিত অপরাধ। যেন কোনও ই-কমার্সের মূল্য, যা ক্রমে বাড়ে। এদেশে এমন শক্তি আছে যারা এখানে বসে সেই নম্বরকে বাড়িয়ে চলেছে।''
দেশের বৈচিত্র সম্পর্কে মৌলানা আজাদের বলা কথাগুলি পুনরাবৃত্ত করেন তিনি। বলেন, এখন স্লোগান ও প্রতীকগুলি ব্যবহৃত হয় কেবল আনুগত্যের পরীক্ষা করার জন্য। মহুয়া দাবি করেন, ‘‘কিন্তু কেউ স্লোগান দেয় না যা কোনও ভারতীয়কে বুঝিয়ে দেবে তারা দেশভক্ত।''
দেশের সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নেন মহুয়া। তিনি বলেন, দেশের বৃহৎ পাঁচটি সংবাদমাধ্যম ‘‘দেশের একজন মানুষের দ্বারাই অপ্রত্যক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রিত বা তাঁর কাছে অপ্রত্যক্ষভাবে ঋণী''। তিনি দাবি করেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক নিয়োজিত ১২০ জন ব্যক্তি নজর রেখেছে জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দিকে। লক্ষ রেখেছে কেউ সরকার-বিরোধী মন্তব্য করছে কি না।
‘ফেক' নিউজের ছড়াছড়ি ও সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গও তোলেন তিনি।
তিনি অ্যাডলফ হিটলারের ডান হাত গোয়েবেলসের মতবাদ তুলে এনে বলেন, ‘‘আপনি বারবার একই মিথ্যে গেলে একদিন সেটা সত্যে রূপান্তরিত হবেই।''
শেষে তিনি কথা বলেন ‘‘নির্বাচন পদ্ধতির স্বাধীনতার অবক্ষয়'' নিয়ে। জানান, নির্বাচন কমিশনের বাংলা থেকে আধিকারিকদের বদলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষুণ্ণ করেছে।