পেঞ্চের গভীর অরণ্যে অপেক্ষা কখন সে বেরিয়ে আসবে
হাইলাইটস
- পেঞ্চের গভীর জঙ্গলে চুপচাপ বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা যায়
- নিস্তব্ধতা ভেঙে কখনও উড়ে যায় নাম না জানা পাখির দল
- জঙ্গল থেকে একলাফে বেরিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যায় বন্য শেয়াল
পিন পড়লেও শোনা যাবে শব্দ। তাও আবার ঘাসের উপর। একরাশ উত্তেজনা নিয়ে দম বন্ধ করা অপেক্ষা। এই বুঝি জঙ্গলের ভিতর থেকে স্বপরিবারে বেরিয়ে এলেন বাঘ মামা। কিন্তু তার দেখা মিলল না অনেক চেষ্টা করেও। তা বলে, জঙ্গলের শোভা এবং বাকি বন্যপ্রাণেরা আমাদের হতাশ করেনি। বাঘ দর্শন খানিকটা ভাগ্যের যা আমাদের এত জঙ্গল ঘুরেও হয়নি। এবারও অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল সেই অভিনব দৃশ্য। যখন সদলবলে রাস্তা পেরিয়ে গেল ওরা। যাঁরা দেখলেন তাঁরা গর্ব করে জানালেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। আমি বলব, জঙ্গলের স্বাদের কথা। যেখানে মাটির সোঁদা গন্ধ, অচেনা পাখির ডাক, ঝোপের ভিতর থেকে জ্বল জ্বল করা দুটো চোখ বা অপূর্ব সুন্দর হরিণের দলের কথা। যা মনে থাকবে সারাজীবন।
ছায়াতালে ছুঁয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা-কাব্রুর ছায়া
পুজো মানেই বেরিয়ে পড়া লোটা কম্বল গুটিয়ে। উত্তর সব সময়ই বেশি টানে। পাহাড় বলে কথা। কিন্তু এ বার ঠিকই করে নিয়েছিলাম উত্তর নয় এবার অন্য কোনও দিক। তাই ছকে ফেলা হল মধ্য প্রদেশের একটা অংশ। তার মধ্য রয়েছে পাঁচমারী আর পেঞ্চ অভয়ারণ্য। আজ বলব পেঞ্চের কথা। জঙ্গল মানেই অন্ধকার থাকতে হাতির পিঠে অথবা জিপে ঢুকে পড়া গভীর অরণ্যে। জঙ্গলবুক পড়ে থাকলে মিলিয়ে নেওয়া যাবে অনেক কিছু। মনে আছে তো মোগলিকে? দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা সেই জঙ্গল?
পাঁচমারী থেকে যখন পেঞ্চের রেসর্টে পৌঁছলাম ততক্ষণে অন্ধকার নেমেছে জঙ্গলের অন্দরে। অনেক পথ জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই পৌঁছতে হল রেসর্টে। বিস্তৃত সেই রেসর্টের দুটো কটেজে শুধুই আমরা। বাকিটা খাখা প্রান্তর আর গা ছমছমে পরিবেশ। জঙ্গলের গন্ধ সারাক্ষণ লেগে থাকল নাকে। কটেজের পিছন থেকেই শুরু হয়েছে জঙ্গল। পেঞ্চ নদী বয়ে গিয়েছে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। তার নামেই এই অভয়ারণ্যের নামকরণ হয়েছে।
দীর্ঘ যাত্রা আর সঙ্গে পরদিন সকালে জঙ্গল সাফারির পরিকল্পনা তাই দ্রুত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফারি বুক করাই ছিল আগে থেকে। ভোর চারটেয় বেরতে হবে। উঠে পড়তে হবে সাড়ে তিনটের মধ্যে। সেই মতোই। রাতের অন্ধকারেই হুডখোলা জিপে শুরু হল যাত্রা। অক্টোবরের শেষে বেশ ঠান্ডা শেষ রাতে। কিন্তু উত্তেজনায় সেই সব এখন খুব একটা গায়ে লাগছে না। জঙ্গল সাফারি একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো।
বরামাঙ্গওয়ার ঝুল বারান্দায় মেঘের সঙ্গে খেলা করে চাঁদের আলো
রাতের অন্ধকার কেটে যাওয়ার আগেই পারমিট নিয়ে আমাদের জিপ ঢুকে পড়ল গভীর জঙ্গলে। সঙ্গে এক মহিলা গাইড উঠলেন মাঝ রাস্তা থেকে। তিনিই সারা রাস্তা আমাদের এ রাস্তা সে রাস্তা দিয়ে জঙ্গলের অন্দরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে গেলেন। এই জঙ্গলে রয়েছেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। প্রতি মোড়ে মোড়ে যেন ওত পেতে বসে রয়েছেন তিনি। চুপচাপ জঙ্গলের অন্দরে তার অপেক্ষা করেই কাটল অনেকটা সময়। তার মাঝেই দেখা মিলল, বিভিন্ন ধরনের হনুমান, হরিন, শেয়াল, ময়ুর, বন্য শুকর, নাম না জানা নানা রকমের পাখি তো ছিলই।
৭৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি এই ন্যাশনাল পার্ক। কোর এরিয়াই সাধারণ মানুষের যাওয়া নিষিদ্ধ। টাইগার রিজার্ভ হলেও দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রানের। তাদের মনুষ্যজাতির দিকে অদ্ভুতভাবে চেয়ে থাকা অনেক প্রশ্ন তৈরি করে। সত্যিই কি আমরা নিজেদের শখ পূরণ করতে ঢুকে পড়ছি ওদের জগতে। ওদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রতিদিন একটু একটু করে ছন্দপতন ঘটাচ্ছি। ভাবুন তো যদি ওরা কখনও হানা দেয় মানুষের নিত্য দিনের জীবনযাত্রায় তাহলে কেমন হবে?
ছবি: লেখিকা
Click for more
trending news