শান্তিনিকেতনে নিজের ঘরে আয়েশ করে
কলকাতা: অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। দেশের গর্ব। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ (Nobel Winner)। কিন্তু কোনোদিনই নাকি নিজের পকেট সামলে উঠতে পারেননি! তিন বউয়ের ৪ সন্তানই কৃতী। ছেলেবেলায় মুখের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল তাঁর। তাই নিয়ে আজ ৮২-তেও তিনি তাজা যুবক (82nd Birthday)। জন্মদিনে জেনে নিন তাঁর সম্বন্ধে আরও এমন বহু অজানা তথ্য---
১. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জন্ম ‘ঢাকার পোলা'র
গর্ব করে বাঙাল তিনি। পূর্বপুরুষদের জন্মস্থান বাংলাদেশের ঢাকা। যদিও অমর্ত্য সেনের জন্ম শান্তিনিকেতনে। বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে, ১৯৩৩ সালে। অমিতা দেবীর কোলে। দাদু ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন সংস্কৃতের শিক্ষক। এছাড়াও, প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ভারতীয় সংস্কৃতি ছিল ক্ষিতিমোহনের নখদর্পনে। এমন যাঁর বংশ পরিচয় এবং জন্মবৃত্তান্ত, তিনি যে পড়াশোনায় তুখর এবং বিশ্বজয়ী হবে, আশ্চর্য কী?
২. এক নোবেলজয়ী রেখেছিলেন নাম
অমিতা দেবী ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য। সেই স্নেহের ছোঁয়া লেগেছিল অর্থনীতিবিদের নামে। এক নোবেলজয়ী নামকরণ করেছিলেন আরেক নোবেলজয়ীর! অমর্ত্য নামকরণ রবি কবির দেওয়া। তারই জোরে কি তিনিও নোবেলজয়ী?
৩. ৪০ দিনের অভুক্তকে দেখেই দারিদ্র্য দূরীকরণে ঝোঁক?
খুব ছোট তিনি তখন। স্কুলে পড়েন। সেই সময় একজন মানুষকে দেখেছিলেন অমর্ত্য। যিনি টনা ৪০ দিন ধরে না খেতে পাননি। তাঁকে দেখে জীবন সম্পর্কে চোখ খুলেছিল তাঁর। ধারণাও বদলেছিল। সব বন্ধুরা যখন মানুষটিকে অকারণে অকরুণভাবে উত্যক্ত করত সেদিনই তিনি মনে মনে ঠিক করেছিলেন, দেশ থেকে গরীবী আর খাদ্যের অভাব সবার আগে বিদায় করবেন।
৪. ছেলেবেলার সঙ্গী ক্যান্সার
স্কুল-কলেজের বন্ধুরা তো ছিলই, তাদের থেকেও বেশি স্পেশ্যাল এক বন্ধুকে তিনি পেয়েছিলেন অল্প বয়সেই। ১৯৭১-এ তিনি আক্রান্ত হন মুখের ক্যান্সারে। টানা রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট করে বন্ধুকে বশ করেন অমর্ত্য।
৫. দক্ষ অর্থনীতিবিদ, কিন্তু নিজের পকেট নিয়ে বেসামাল!
এই তকমা তাঁর প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেব সেনের দেওয়া। তাঁর কথায়, অর্থনীতিতে দক্ষ। কিন্তু সংসার চালানোয় একদম আনা়ড়ি! কোনোদিন নিজের সন্তানদের প্রতি মনোযোগ দেননি।
৬. He নয় She-এ বিশ্বাসী
লিঙ্গ সমতায় ভীষণ বিশ্বাসী। এবং আলাদা সম্মান করেন নারী জাতিকে। এতটাই যে কোনও অচেনা-অজানা ব্যক্তি সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে He নয় She শব্দ ব্যবহার করেন।
৭. বাংলাদেশের সম্মানীয় নাগরিক অমর্ত্য ঘোরতর নাস্তিক!
এমন রত্নকে কে হেলায় হারাতে চায়? যেহেতু তাঁর পূর্বপুরুষ বাংলাদেশি তাই ঢাকা তাঁকে সম্মানীয় নাগরিকত্ব দিয়েছে। শিক্ষার কারণে হোক বা ক্যান্সারকে জয় করার জোরে, অমর্ত্য ঘোরতর নাস্তিক।
৮. ৩ বউ, ৪ সন্তান
অর্থনীতিতে সফল হলেও সংসারী হিসেবে অমর্ত্য ততটাও সুখী হননি। প্রথম বিয়ে সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেনের সঙ্গে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত নবনীতার সঙ্গে ঘর করার সময় দম্পতির দুই সন্তান অন্তরা আর নন্দনা দেব সেন। বড় মেয়ে অন্তরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং 'দ্য লিটল ম্যাগাজিন'র প্রতিষ্ঠাতা। ছোট মেয়ে নন্দনা অভিনেত্রী এবং সমাজসেবী। তাঁর অভিনীত ছবি 'গুড়িয়া', 'অটোগ্রাফ' যথেষ্ট জনপ্রিয়।
১৯৭৮-এ তিনি বিয়ে করেন ইতালীয় অর্থনীতিবিদ এভা কলরনিকে। ১৯৮৫ সালে লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর ব্রিটিশ অর্থনীতির ইতিহাসবিদ এমা রথসচাইল্ডকে। এই বিয়ের ফসল ইন্দ্রাণী সেন, কবীর সেন। ইন্দ্রাণী নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক। ছেলে এমসি কবীর নামে বোস্টনের বিখ্যাত মিউজিশিয়ান।
বিশ্ব আজ কুর্নিশ করছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে। ফিরে দেখছে তাঁর কর্মকাণ্ডকে। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। পরিচালক অরিন্দম শীল সহ বহু বিশিষ্ট তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে।
Click for more
trending news