This Article is From Oct 13, 2018

Blog: সামনে দিয়ে ধরতে হয়, না হলে উড়ে পালায়

জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি 'সময়'-এই কথাটা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু গুরুত্ব বুঝি কতজনে? আমার মনে হয় সময়ের গুরুত্ব বোঝার জন্য, আমাদের প্রত্যেকের সময়ের 'সজ্ঞা' জানা উচিত। বাংলায় কিছু লিখব, অথচ বাংলার কবিদের স্মরণ করব না, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাব না, এমন ধৃষ্টতা দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই।  তাই কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের একটি পরিচিত কবিতা 'কাকাতুয়া'-র  কিছু পংক্তি দিয়ে শুরু করলাম আমার লেখা।  

            সময় চলিয়া যায়-
          নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।”
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্।”

এই অতি পরিচিত পংক্তি গুলি আমরা প্রায় সকলেই জানি, ছোটোর থেকে বাবা-মারা সময়ের মূল্য বোঝানোর জন্য এই পংক্তি গুলি আমাদের মুখে মুখে শিখিয়ে দেন। আমার সকলেই বলি এর অর্থ হল ''নদীর জল যেমন ক্রমাগত প্রবাহিত, সময়ও তেমনি ক্রমাগত প্রবাহিত। ইত্যাদি... ইত্যাদি।'' আমরা মুখস্থ করার মতো পংক্তি গুলি আওড়ে যাই। কিন্তু জীবনে চলার পথে আমরা কতজন এর প্রয়োগ করি? 

যারা সময়ের সাথে চলতে জানেন তারা হন প্রকৃতির পূজারী। বাংলা সাহিত্যের  স্তম্ভ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রকৃতির পূজারী। তাঁর বেশির ভাগ সৃষ্টির মধ্যেই পাওয়া যায় প্রকৃতির ছোঁয়া, প্রকৃতির প্রেম আর ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা কোথায় যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। 'সোনার তরী' কবিতাটির মধ্যে পাওয়া যায় তার আসাধারণ সংমিশ্রন।  কবিতাটি পড়লে আপাত দৃষ্টিতে প্রকৃতির বর্ণনা বলে মনে হলেও, কোথায় যেন  রয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অপার আনুগত্য। অন্যদিকে পাশ্চাত্য জীবন স্বামিজীকেও ভীষণ ভাবে প্রবাবিত করত। কারণ তারা সময়ের সাথে চলতে জানেন। এবার আপনার মনে কেন প্রকৃতি প্রেম এই কথাটি আসতেই পারে? 

আসলে প্রকৃতি কখন সময়ের বাইরে যায় না। কখনও দেখেছেন কি ভোরের বদলে সন্ধ্যায় সূর্যোদয় হচ্ছে! নভেম্বর মাসে শীতের আমেজ উপভোগ না করে গরমের দাবাদহে জ্বলতে হয়েছে কি? হ্যাঁ, একেই বলে সময়ের সাথে চলা, ইংরেজিতে যাকে বলে 'টাইম ম্যানেজমেন্ট'।

আগেই বলেছি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই পাবেন প্রকৃতির ছোঁয়া। বিশেষ করে 'ছিন্নপত্র' ও 'গল্পগুচ্ছ'। কোথায় যেন ছিন্নপত্রের মধ্যেই 'গল্প গুচ্ছের' বীজ  বপন করা আছে। 'ঘাটের কথা' -য় আমরা পাই অসাধারণ সন্ধ্যার বর্ণনা।  প্রকৃতিকে ভালো না বাসলে  প্রকৃতির এমন সুন্দর বর্ণনা হয়তো কেউই লিখতে পারতেন না।  মন্দিরে কখন শাঁখ বাজে, ঘাটে কখন নৌকা এসে দাঁড়ায়, প্রতিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আমরা পাই এই ছোট গল্পের মধ্যে।  

আপনাদের অতি পরিচিত, 'সমাপ্তি' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আপনারা দেখতে পান, মৃণালিনীকে। এই মৃণালিনী চরিত্রটিও কবিগুরুর নিজের চোখে  দেখা, যা আমরা জানতে পারি 'ছিন্নপত্র'-এর মধ্যে দিয়ে।  

এরপর 'সময়' নিয়ে আপনাদের শোনাব একটা ছোট্ট মজার কাহিনী।  একবার এক ব্যক্তি, এক চিত্রশিল্পীর এক্সজিভিশন দেখতে গেছিলেন। সেখানে তিনি দেখতে পান এক অদ্ভুত চিত্র। একটা মানুষের অদ্ভুত ছবি দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে। সেই ছবিটিতে একটা মানুষের মাথার পিছন দিকে চুল ছিল না, কিন্তু সামনের দিকে ছিল অনেক লম্বা লম্বা চুল। যা দিয়ে তার মুখটা সম্পূর্ণ ঢাকা ছিল।  হাত দুটির বদলে ছিল বিশালাকৃতির পাখনা। আর পা ছিল শিকল দিয়ে বাঁধা।  

জানেনা এই চিত্র শিল্প কার ছবি এঁকে ছিলেন? 'সময়ের',যাকে সামনে দিয়ে ধরতে হয়, কখনই পিছন দিয়ে ধরা যায় না। সামনে থেকে সময়কে ধরার জন্য 'ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস করুন।  তবেই তো আপনি সময়ের সাথে চলতে পারবেন। পিছন থেকে সময়কে ধরতে গেলে তা আপনার হাত পিছলে উড়ে যাবে। কারণ তার হাতের পরিবর্তে আছে বিশালাকার দুটি পাখনা।  কিন্তু যদি আপনি সময়কে সামনের দিকে দিয়ে ধরতে পারেন, তাহলে সে হয়ে উঠবে আপনার দাস। কারণ ওর পা দুটো শিকল দিয়ে বাঁধা। যার ফলে সে স্বীকার করবে আপনার আনুগত্য।  আপনি তাকে যেভাবে চালাবেন, সে সেই ভাবেই আপনার সাথে চলবে।  হয়তো একেই ইংরেজিতে বলে 'টাইম ম্যানেজমেন্ট'।  

 

DISCLAIMER (প্রত্যাখ্যান) : এই ব্লগে লেখক নিজের বিচারধারা ব্যক্ত করেছেন। এই নিবন্ধের মধ্যে যে বক্তব্য পেশ করা আছে তার জন্য NDTV কোনো ভাবেই দায়ী নয়। নিবন্ধে যে তথ্য বা মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভাবেই লেখকের নিজেস্ব চিন্তার অভিব্যক্তি।  তার জন্য NDTV কোনো ভাবেই দায়ী নয়।  এর জন্য NDTV কোনো ভাবেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়.

.