কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মন দিয়ে শুনতে গিয়ে ইতিহাস ভূগোল সাহিত্য গুলিয়ে গিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে গিয়েই অতিথি অভ্যাগতদের আরেকবার ঘেঁটে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী! বিদ্যাসাগরের ২০০ বছরের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ভাষণ দিতে গিয়ে বিদ্যাসাগরকেই মাইলস্টোনের আবিষ্কর্তা বলে ফেলেছেন মাননীয়া। মঙ্গলবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে তাঁর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী পালন করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একটি অনুষ্ঠানে তিনি মঞ্চ থেকে বলেন, রাস্তার ফলক দেখে দেখেই বিদ্যাসাগর মাইল আবিষ্কার করেছিলেন। এখানেই শেষ নয়! মুখ্যমন্ত্রী মমতা আরও বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগর জ্যোতির্বিজ্ঞানেও পারদর্শী ছিলেন।”
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে “রাজনৈতিক অন্ধরা”, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগরকে মাইল আবিষ্কারক মনে করলেও, ইতিহাস অবশ্য বেশ আলাদাই। বাবা ঠাকুরদাসের সঙ্গে যাওয়ার সময় মাইল ফলক গুনে গুনে যেতেন বিদ্যাসাগর। সেখান থেকেই বিদ্যাসাগর সংখ্যা চিনেছিলেন। ফলক দেখে মাইল আবিষ্কার মোটেও করেননি তিনি। প্রাচীন রোমান যুগেও মাইলের অস্তিত্ব ছিল। দূরত্বের সূচক হিসাবে মাইলের উল্লেখ মেলে সব দেশেই। মাইলের পরিমাপ বলা হয় এক হাজার পেস। অর্থাৎ রোমান সেনারা কুচকাওয়াজ করার সময় প্রতি পদক্ষেপে যে দূরত্ব পেরোত তাকেই বলা হত এক পেস। ১ হাজার পেসের সমান হচ্ছে এক মাইল।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে টুইট মুখ্যমন্ত্রীর
বিদ্যাসাগর আত্মজীবনীতে নিজেই মাইল ফলকের প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘প্রথমবার কলিকাতায় আসিবার সময়, সিয়াখালায় সালিখার বাঁধা রাস্তায় উঠিয়া, বাটনাবাটা শিলের মত একখানি প্রস্তর রাস্তার ধারে পোঁতা দেখিতে পাইলাম। কৌতূহলাবিষ্ট হইয়া, পিতৃদেবকে জিজ্ঞাসিলাম, বাবা, রাস্তার ধারে শিল পোঁতা আছে কেন। তিনি, আমার জিজ্ঞাসা শুনিয়া, হাস্যমুখে কহিলেন, ও শিল নয়, উহার নাম মাইলষ্টোন।” বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে ইংরেজি সংখ্যা শিখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার অবশ্য এত জটিলতায় না গিয়ে বিদ্যাসাগরকেই মেইল আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিয়ে দিয়েছেন। যদিও মুখ ফস্কে ভুল বলে ফেলার ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগে মমতা বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধি যখন অনশন করছিলেন রবীন্দ্রনাথ তখন ফলের রস খাইয়ে তাঁর অনশন ভঙ্গ করেন। এবং এর পরেই কবি ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়' গানটি লিখেছিলেন। যদিও ইতিহাস বলছে, বেলেঘাটায় গান্ধিজি অনশন করেছিলেন ১৯৪৭ সালে। রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হন ১৯৪১ সালে। বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। বিদ্যাসাগরের ২০০ বছরে তাঁরই এমন মন্তব্যে তাই কেউ বা স্তম্ভিত, কেউ বা মুচকি হেসেও নিয়েছেন ফাঁকতালে।