New Delhi:
ফেসবুকে কী কী হয়? বরং, প্রশ্নটা এভাবে করা যাক যে- ফেসবুকে কী কী হয় না?! আমাদের যাপনের প্রতিটা মুহূর্তের রন্ধ্রে ফেসবুক ঠিক সেভাবেই ঢুকে পড়েছে, যেভাবে অচিকিৎস্য অসুখের বিষ প্রবেশ করে রক্তে। যত দিন যাচ্ছে, তত এই ধারণাটিই ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, এ ব্যতীত এই সময়ের নাগরিক জীবনটি বিলকুল অন্ধকার। আমাদের অজস্র আনন্দ, দু:খ, লোভ, হেরে যাওয়া, জিতে যাওয়া সবকিছুকে সঙ্গে নিয়ে মার্ক জুকারবার্গের এই স্বপ্নটি ক্রমে পরিণত হয়েছে আদতে একটি দেশে।
এমনই এক দেশ, যার কোনও কাঁটাতার নেই। যত মানুষ ফেসবুকে আছে, তত মানুষ চিন এবং ভারত ছাড়া আর কোনও দেশেই নেই। নিছকই নিজের কথাটি বলার মাধ্যম থেকে এটি ধীরে হয়ে উঠেছে এক জীবনে অনেক জীবন মিশে যাওয়ার এক রূপকথাসম হাইওয়ে। কেরালার মাল্লাপুরম অঞ্চলের মেয়ে জ্যোতি কেজি। পেশায় ডিজাইনার। বয়স আঠাশ বছর। সম্প্রতি এমন একটি কাজ করেছে, যে জিনিস ফেসবুকেও সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। কী কাজ করেছে সে? দিয়েছে নিজের একটি বিজ্ঞাপন। এবার, ফেসবুকে নিজের বিজ্ঞাপন করাটি নতুন কিছু নয়।
বহু মানুষই হামেশাই তা করে থাকেন। কিন্তু, জ্যোতির বিজ্ঞাপনটি তাদের থেকে কিঞ্চিত আলাদা। 'বিজ্ঞাপন' শব্দটির মধ্যে, অন্তত ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের মধ্যে খুব সূক্ষ্মভাবে যে আগ্রাসী বার্তাটি নিহিত থাকে, তা হল, নিজের ঢাকটি পেটানোর ইচ্ছা। জ্যোতি তা করেনি। সে এটিকে ব্যবহার করেছে বিবাহ-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসাবে। কী লিখেছে সে সেখানে নিজের ফেসবুকিয় বন্ধুদের উদ্দেশে? একটু দেখে নেওয়া যাক। 'আমি একা। তোমাদের পরিচিত কোনও অবিবাহিত মানুষ থাকলে, আমাকে একটু জানিয়ো। সে যদি বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, তবে আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি বিয়ে করতে চাই। দুজনের দুজনকে পছন্দ হলে তবেই। কোন জাতের ছেলে অথবা তার কোষ্ঠী কীরকম- এই ব্যাপার নিয়ে আমি আগ্রহী নই। মানুষটাকে পছন্দ হলেই হল। আমার বাবা-মা দুজনেই প্রয়াত। আমার বয়স আঠাশ বছর। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে বিএসসি পাশ করেছি। দাদা মুম্বাইতে আর্ট ডিরেক্টরের কাজ করে। বোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে'।
মালয়ালম ভাষায় লেখা এই বিজ্ঞাপনটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয় গত ছাব্বিশে এপ্রিল। ছ'হাজার মানুষ শেয়ার করেন এই পোস্ট। এই বিজ্ঞাপনটি নিজের টাইমলাইনে দেওয়ার পর আরেকটি পোস্টও করেন জ্যোতি। ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গের উদ্দেশে। জ্যোতি সেখানে লেখেন, 'আমাদের দেশে সম্বন্ধ করে বিয়ের ব্যাপারটি খুব জটিল একটি প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়েই। ফেসবুকের মতো এত বড়ো একটি মাধ্যমকে বিবাহ-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করার কথাটি এবার আপনার ভাবা উচিত। এত মানুষ রয়েছেন এখানে। এর ফলে দুটো জিনিস হবে।
এক) ঘটক শ্রেণিটির নিপীড়ন থেকে কিছুটা পাওয়া যাবে আর ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটগুলোকেও গাদা গাদা টাকা দিতে হবে না।
দুই) এর ফলে, সম্বন্ধ করে বিয়ে করার সময় জাতপাত নিয়ে যে প্রবল হুজুগটা লক্ষ করা যায়, তা কমার সম্ভাবনা।
জুকারবার্গ এই অনুরোধে কতটা সাড়া দেবেন, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে, বিজ্ঞাপনটি দেওয়ার পর শেয়ারের যা বহর, তাতে চারহাত এক করার স্বপ্নটি যে সম্পূর্ণ বিফলে যাবে না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়...Click for more
trending news