কালো জামা পরা এই ব্যক্তি ওই মহিলার দিকে আঙুল উঁচিয়ে তাঁকে সতর্ক করে: “আরাম সে বাত কর"।
নয়াদিল্লি: দলিত বলে মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে দিতে বাধা দিলেন এক ব্যক্তি, শুধু বাধা নয় আঙুল উঁচিয়ে রীতিমতো শাসানি দিতেও দেখা গেল ওই ব্যক্তিকে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর (Uttar Pradesh's Bulandshahr) জেলার একটি মন্দিরে বাল্মিকী সম্প্রদায়ের (Valmiki community) একদল মহিলাকে মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিওর মাধ্যমে, ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। বুধবার অনলাইনে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এক মহিলার মোবাইল ফোনেই তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ২৫ অক্টোবরের। সমস্তটাই ধরা পড়েছে ছয় মিনিটের ওই ভিডিওতে। ভিডিওটিতে, কালো শার্ট পরা একজন ব্যক্তিকে একটি বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এবং মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে বাধা দিতে দেখা যায়। মহিলাদের বলতে শোনা যায়, ভেতরে ঢুকে যদি এই মহিলারা পুজো দেন তাতে তাঁর এত ভয় কীসের? তথাকথিত উচ্চবর্ণের এই ব্যক্তি উত্তর দেয়: “কেন তোমাদেরকে ভয় পেতে যাব আমি!” তারপরেই নিজে মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
এক মহিলা বলেন, “যদি কেউ শোনেন যে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ তবে তাঁরা লজ্জা পাবেন।” উপস্থিত অন্যান্য মহিলারাও বলেন, এই মন্দিরে পুজোর অধিকার তাঁদের ছিল এবং যতক্ষণ না তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে মন্দিরের দরজা ছেড়ে নড়বেন না তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ চলন্ত ট্রেনে স্টোভ বিস্ফোরণ! প্রাণ বাঁচাতে মরণ ঝাঁপ যাত্রীদের, নিহত ৬৫
তখন কালো জামা পরা এই ব্যক্তি ওই মহিলার দিকে আঙুল উঁচিয়ে তাঁকে সতর্ক করে: “আরাম সে বাত কর"। পালটা আক্রমণে এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, “তুমি যদি আমাদের মারতে চাও মারো কিন্তু আমরা এখানেই বসে থাকব।”
কালো শার্ট পরা লোকটি, যিনি তখনও পর্যন্ত ফোনে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি তারপরে তিনি মহিলাদের বলেন সম্পত্তি এবং মন্দিরটি ‘ঠাকুর'দের, যারা উচ্চ বর্ণের।
“আমি কেন আপনাদের মারব? এই সম্পত্তি ঠাকুরদের। ঠাকুর ও ব্রাহ্মণরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্রার্থনা করে আসছেন,” বলেন ওই ব্যক্তি।
“এইটা মন্দির, একটা মন্দির,” চিত্কার করে বলে ওঠেন এক মহিলা।
ক্যামেরাটি জুম করে ভিডিওতে তখন মন্দিরটি দেখানো হয়। মন্দিরের মধ্যে একজন সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে দেখা যায়, তিনি মূল দরজাটি তালাবন্ধ করে দেন। দুই ব্যক্তিই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের মোবাইল ফোন ঘাটতে থাকেন। এদিকে ওই মহিলারা মন্দিরে প্রবেশের অনুমতির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুনঃ কীভাবে খতম করা হল বাগদাদিকে? ভিডিও প্রকাশ করে জানাল আমেরিকা
তর্ক যত বাড়তে থাকে এই ব্যক্তিরা ওই মহিলাদের উপর আরও জোর খাটাতে শুরু করে দেয় এবং মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি আরও প্রকট করে তুলতে থাকেন। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ জন ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত মহিলা দরজার চারপাশে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিছু স্কুলপড়ুয়া শিশুদেরকেও ভিডিওতে দেখা যায়।
মহিলাদের পক্ষ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা এক নেতা বিজেন্দ্র সিং বাল্মিকী বলেন, “এই মানুষেরা আগে এখানে প্রার্থনা জানাত তবে গত সপ্তাহে কিছু পুরুষ তাদের প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে কারণ তারা দলিত। আর কতদিন এভাবে বৈষম্য চলেই যাবে... তাও আজকের এই যুগে? তারা কি চায় যে আমরা হিন্দু ধর্মের নিন্দা করি?”
পুলিশ ২৫ শে অক্টোবর তপশিলী জাতি/উপজাতি আইন অনুসারে এক ব্যক্তিকে লাঞ্ছনা করার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই ভিডিওটি যেখানে মহিলাদের ঢুকতে দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে –ওই একই এলাকার ঘটনা এবং একই দিনেরও।
“ঘটনাগুলি একটার সঙ্গে একটা জড়িত বলেই মনে হচ্ছে, একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি এবং সত্য অনুসন্ধান করছি,” জানিয়েছেন বুলন্দশহর জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা অতুল শ্রীবাস্তব।