সম্প্রতি ট্যালেন্ট শো’গুলিতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা মানুষদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের মধ্যেই কলকাতার একটি মিউজিক শো ভেঙে দিল চেনা ছকটিকে। মঞ্চ মাতানোর সুযোগ করে দিল তারা, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকা প্রতিযোগীদের। শনিবার দিন অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল রোটারি সদনে। বিশেষ ক্ষমতাধর কয়েকজন ড্রামের তালে পা মিলিয়ে শুরু করেছিল ওই অনুষ্ঠান।
সম্প্রতি একটি ঘটনায় ট্যালেন্ট হান্ট শো’তে প্রতিবন্ধকতা থাকা মানুষদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারটি সামনে চলে এসেছিল। যে ঘটনাই আসলে উদ্যোক্তাদের এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। কয়েকজন প্রতিযোগী পরবর্তী পর্ব এবং চূড়ান্ত পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও তাঁদের বসিয়ে দিতে হয়েছিল। তার কারণ, মঞ্চে তাঁদের তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অনেক বেশি সময় লাগবে।
এই ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করা এক সমাজকর্মী জিজা ঘোষ নাগ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পালসির সহায়তায় এমন বহু বিশেষ প্রতিবন্ধকতা থাকা প্রতিযোগীকে নিয়ে আয়োজন করল এই অনুষ্ঠান। যার নাম- ‘হাম কিসি সে কম নেহি’।
অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি ছিলেন বিখ্যাত ড্রামার বিক্রম ঘোষ। তিনি অনুষ্ঠানটিতে এসে প্রতিযোগীদের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে বিস্ময়প্রকাশ করে বলেন, “এই ইভেন্টের নামটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এটা নাসির হোসেন সাহেবের একটি ছবির নাম। এবং, হাম কিসি সে কম নেহির ঠিক পরেই যে ছবিটি তিনি বানিয়েছিলেন, তার নাম- জমানে কো দিখানা হ্যায়। এই দুটো নাম কোথাও যেন একসঙ্গে মিশে যায়। এই প্রতিযোগীরা কোনও অংশে কারও থেকে কম নয়। এবং, তাঁরা এখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন- জমানে কো দিখানা হ্যায়”।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পালসির অগ্নিদূত মঞ্চে ওঠার আগে একটি গান গাইছিল। ‘ইতনি সি হাসি, ইসনি সি খুশি’। তার কন্ঠস্বরে মোহিত হয়ে উঠেছিল চারপাশ।
শুধু দর্শকরাই নয়, প্রতিযোগীরাও একইরকম উৎসাহিত ছিল অনুষ্ঠানটি নিয়ে। মেন্টেড স্কুলের আবির যেমন বলল, “আমি তবলা বাজাতে পছন্দ করি। সবাই আমরা তবলা শুনে হাততালি দিলে ভালোলাগে। পুরস্কার পেতেও দারুণ লাগে আমার”।
অনেক অন্ধকারের পরেও যে আলো ঠিকই থেকে যায়, এই ধরনের অনুষ্ঠানই তার বড় প্রমাণ।