কলকাতা: সাত বছর পরে ফাঁসি নির্ভয়া কাণ্ডের চার ধর্ষকের (Nirbhaya Case)। সাত বছর পরে সম্ভবত সারাদিন চোখের জলে ভিজে রাতে দু'চোখের পাতা এক করবেন নির্ভয়ার মা-বাবা। সাধারণের হয়ত আস্থা ফিরবে দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি। কিন্তু ধর্ষণ করে খুনের অপরাধ কতটা কমবে এতে? মৃত্যুদণ্ডে আদৌ কি সংশোধিত হবে অপরাধীমনস্করা? বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা কতটা কাম্য? মৃত্যুদণ্ড না দিয়েও কি সংশোধন করা যেত চার ধর্ষককে? কেন ইদানিং মুড়ি-মুড়কির মতো বাড়ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা? NDTV যোগাযোগ করেছিল কলকাতার বিশিষ্ট মনোবিদ ডা. নীলাঞ্জনা সান্যালের (Dr. Nilanjana Sanyal) সঙ্গে। তাঁর কী মত নির্ভয়া ফাঁসি নিয়ে? জেনে নিন----
ডা. নীলাঞ্জনা সান্যাল (অধ্যাপক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ):
নির্ভয়া ধর্ষকদের ফাঁসি কী বার্তা দিল সমাজকে?
যে জঘন্য অপরাধ তারা করেছিল, তাদের এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সত্যিই প্রয়োজন ছিল। কারণ, একটি মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুন করে যে নিকৃষ্টতম অপরাধ তারা করেছে সেটা যে একেবারেই কাম্য নয় সেটা তো বোঝাতে হবে। তার জন্যেই এই শাস্তি। কেন সাজার রায় শোনাতে সাত বছর লেগে গেল, বলতে পারব না। তবে সাত বছর পরেও যে শাস্তি বহাল থাকল, এটাই সমাজকে দেখাবে, দেরি হলেও অন্যায়ের শাস্তি মেলে। পাশাপাশি, এটাও বুঝবে মানুষ, অপরাধ যত নিকৃষ্ট হবে শাস্তি ততটাই ভয়ঙ্কর হবে।
নির্ভয়া ধর্ষকদের ফাঁসি কী বার্তা দিল সমাজকে?
যে জঘন্য অপরাধ তারা করেছিল, তাদের এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সত্যিই প্রয়োজন ছিল। কারণ, একটি মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুন করে যে নিকৃষ্টতম অপরাধ তারা করেছে সেটা যে একেবারেই কাম্য নয় সেটা তো বোঝাতে হবে। তার জন্যেই এই শাস্তি। কেন সাজার রায় শোনাতে সাত বছর লেগে গেল, বলতে পারব না। তবে সাত বছর পরেও যে শাস্তি বহাল থাকল, এটাই সমাজকে দেখাবে, দেরি হলেও অন্যায়ের শাস্তি মেলে। পাশাপাশি, এটাও বুঝবে মানুষ, অপরাধ যত নিকৃষ্ট হবে শাস্তি ততটাই ভয়ঙ্কর হবে।
"আমি মেয়ের ছবিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম": ফাঁসি কার্যকরের পর বললেন নির্ভয়ার মা
মৃত্যুদণ্ড কতটা ভয় ধরাবে অপরাধীদের মনে?
মনের খুব জোর না থাকলে কোনও অপরাধ-ই করা যায় না। এই ধরণের ন্যক্কারজনক অপরাধ তো নয়ই। সবাই দেখলেন, ফাঁসি ঘোষণার পরে কিন্তু ভয়ে বা আতঙ্কে একেবারেই ভেঙে পড়েনি চার অপরাধী। বরং লড়েছে সমানে। তাই মৃত্যুদণ্ড কতটা মনোবল ভাঙতে পারবে অপরাধীদের সেবিষয়ে যুক্তি-তক্কো থাকলেও অন্তত ওরা এটা বুঝুক, শাস্তি অবশ্যম্ভাবী।
দেরিতে হলেও শাস্তি মিলল ধর্ষকদের। দেশের আইনি ব্যবস্থার ওপর আস্থা বাড়বে সাধারণে?
অবশ্যই। যাঁরা একদম সাধারণ মানুষ, আইন বোঝেন না, মনস্তত্ত্ব বোঝেন না তাঁরাও জানেন বা বোঝেন, গুরুদণ্ডের গুরু শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই সাজা ঘোষণার পর থেকে সারা দেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
সমাজ থেকে অপরাধের মূল উপড়ে ফেলতে কী করা উচিত?
সচেতনতা বাড়ানো। অপরাধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এর প্রথম ধাপ। যারা অপরাধী তাদের ভেতর কিন্তু ছোট থেকেই অপরাধমনস্কতা লুকিয়ে থাকে। কারোর প্রকাশ পায় সঙ্গে সঙ্গে। কারোর দেরিতে। কিন্তু যখনই তা প্রকাশ পাবে বা প্রকট হবে তখনই তা সংশোধনের জন্য রি-হ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তি করতে হবে তাকে। এবং মনোবিদের দ্বারস্থ হতে হবে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের জন্য।
দীর্ঘ ৭ বছর পর ফাঁসিতে ঝোলানো হল নির্ভয়া কাণ্ডের ৪ আসামিকে
অপরাধপ্রবণতা সত্যিই কি বেড়েছে নাকি প্রকাশ্যে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে এমনটাই?
সত্যিই অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বা স্ট্যাটিসটিক্স বলছে সেকথা। তার কারণ, সমাজে গতিপ্রকৃতির এত পরিবর্তন হয়েছে যে মানুষের মধ্যে 'আমরা বঞ্চিত' এই মনোভাব অত্যন্ত বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বঞ্চনাবোধ যার মধ্যে তীব্র এবং আত্মসংযম কম সে-ই বাধা পেরিয়ে অপরাধ করছে।