প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরোধীদের প্রতি ছোঁড়া চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। দেশ জুড়ে চলা নাগরিকত্ব আইনের (Citizenship Amendment Act) বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি (Narendra Modi) ঝাড়খণ্ডের একটি নির্বাচনী জনসভায় এই মন্তব্য করেন যে, বিরোধীরা আসলে প্রতিটি পাকিস্তানিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে ইচ্ছুক। এরই পাল্টা উত্তরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা চিদাম্বরম (P Chidambaram) প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, "যাঁরা ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের নাগরিক তাঁদের আমরা কেন নাগরিকত্ব দেব? এ জাতীয় চ্যালেঞ্জের অর্থ কী?" সম্প্রতি একটি দুর্নীতির মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রাক্তন ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী । মুক্ত হাওয়ায় এসেই রাজনীতির আঙিনায় ফের তৎপর হয়েছেন তিনি। "এই ঘটনা অত্যন্ত সন্তোষজনক যে শিক্ষার্থী তথা তরুণ প্রজন্ম উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, সহনশীল এবং তাঁরা মানবতাবাদ দেখাচ্ছেন। সরকার কি এই মূল্যবোধকেই চ্যালেঞ্জ করছে", প্রশ্ন করেন পি চিদাম্বরম।
কংগ্রেস দেশের মুসলিমদের মধ্যে "ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছে", এমন অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।মঙ্গলবার ফের জোর গলায় তিনি বলেন যে নতুন নাগরিকত্ব আইনে দেশের কোনও নাগরিকই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না।
সুপ্রিম কোর্টে আজ নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত ৬০টি আবেদনের শুনানি
"আমি কংগ্রেস এবং তাঁর বন্ধদের কাছে একটি খোলা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই" ঝাড়খণ্ডের সভামঞ্চ থেকে বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । "যদি তাঁদের (কংগ্রেস এবং তাঁর বন্ধুদের) সাহস থাকে তবে তাঁরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করুক যে তাঁরা প্রতিটি পাকিস্তানি নাগরিককে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তখন দেশ তাঁদের এর জবাব দেবে। শুধু তাই নয়, যদি তাঁদের সাহস থাকে তবে তাঁরা বলুন যে তাঁরা জম্মু ও কাশ্মীরে ফের ৩৭০ ধারা প্রয়োগ করবে যা মোদির আমলে রদ করা হয়েছে", বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস দেশে "মিথ্যা ও আতঙ্ক" ছড়ানোর রাজনীতিতেই অভ্যস্ত ছিল। কংগ্রেসের উচিত "এই গেরিলা রাজনীতি বন্ধ করা", বলেন তিনি।"কংগ্রেসের বিভাজনমূলক নীতির কারণে দেশ ইতিমধ্যেই একবার ভাগ হয়েছে। দেশকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে তাঁরা। লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারীকে মুক্ত ছেড়ে দিয়েছে কেন? যাতে তাঁরা ভারতে প্রবেশ করেন এবং তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করতে পারে কংগ্রেস", বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
এর জবাবে কংগ্রেসের আরেক প্রবীণ নেতা কপিল সিব্বল টুইট করেন: "প্রিয় মোদিজি, পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পরিবর্তে দয়া করে আপনার দেশের নাগরিকদের প্রতি মনোযোগ দিন এবং তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ভারতবাসী আপনাকে তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্যেই নির্বাচিত করেছে"।
গত বুধবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এই আইনে স্বাক্ষর করার পরেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। বিশেষত দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, বাংলা এবং দিল্লিতে এই আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। অসমে বিক্ষোভের পর ঘটা হিংসার ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং, ৩ জনেই ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা তাঁদের রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি প্রয়োগ করতে দেবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর পাক সফরের কথা মনে করিয়ে আক্রমণ কংগ্রেসের
এদিকে দিল্লিতে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবিবার প্রতিবাদ মিছিল করার সময় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে। পুলিশ ওই পদযাত্রা থামানোর চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ্য করে কেউ বা কারা পাথর ছুঁড়ে মারে, পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাস এবং দু'চাকার গাড়িও। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা অনুমতিতে পুলিশ ঢোকে, এমন অভিযোগেও উত্তাল হয় রাজধানী। শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটকেও রাখে দিল্লি পুলিশ, পরে যদিও তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও আছড়ে পড়ে প্রতিবাদের ঝড়।