জনগণনার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জীও আপডেট করতে চায় কেন্দ্র
নয়াদিল্লি:
জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী (National Population Register) আপডেট করার প্রস্তাবে মঙ্গলবার সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, যার সঙ্গে যোগ রয়েছে জনগণনার। এতে ৮,৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। জনগণনা কমিশন জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেকটি “স্বাভাবিক বাসিন্দা”র পরিচিতি সম্পর্কে তথ্য রাখতেই জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী তৈরি করা হয়। জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীতে একজন “স্বাভাবিক বাসিন্দা”, হলেন তিনিই, যিনি কোনও জায়গায় ৬ মাস বা তার বেশী সময় ধরে বাস করছেন, অথবা কোনও ব্যক্তি কোনও একটি জায়গায় ৬ মাস বা তার বেশী সময় ধরে বসবাস করতে ইচ্ছুক। ভারতের প্রত্যেক “স্বাভাবিক বাসিন্দা”র জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীতে নাম তোলা বাধ্যতামূলক।
জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর কাজ করা হবে ২০২০ এর এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে, পাশাপাশি জনগণনার সঙ্গে সঙ্গেই অসম সহ সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বাড়ির তালিকা তৈরির কাজও হবে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জী হওয়ায় অসমকে তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।
প্রত্যেক স্বাভাবিক বাসিন্দাকে তাঁদের তথ্য দিতে হবে, যেমন, নাম., বাড়ির কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক, বাবার নাম, মায়ের নাম, স্বামী বা স্ত্রীর নাম (বিবাহিত হলে), লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, বিবাহিত কিনা, জন্মস্থান, দেশ, স্বাভাবিক বাসিন্দার বর্তমান ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানায় বসবাসের মেয়াদ, স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা।
একজন “স্বাভাবিক বাসিন্দার” জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর হল কোনও একটি জায়গা সম্পর্কিত সে গ্রাম হোক বা শহর, উপজেলা, জেলা বা রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। ২০১০ এবং ২০১৫ তেও এটি করা হয় এবং ২০০৪ সালে সেটি অনুমোদন করে ইউপিএ সরকার, তার আগে ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়।
এর ফলে কেন্দ্র “ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বাধ্যতামূলক নিবন্ধীকরণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারবে”, পাশাপাশি আসন্ন জনগণনার কাজ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে, এবং আয়ুষ্মান ভারত, জনধন যোজনার মতো বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দিতে পারবে।
জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর কাজ করার সময় কোনও বায়োমেট্রিক নেওয়া হবে না এবং আধার ও পাসপোর্টের নম্বর জানানোর বিষয়টি ঐচ্ছিক করা হবে বলে জোর দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। কেন্দ্রীয় সরকার আরও জোর দিয়েছে যে, অসমে চলতি বছরে করা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর সঙ্গে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর কোনও যোগ নেই।
যাইহোক, জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী করাকে অনেকেই এনআরসির প্রথম ধাপ বলেই মনে করছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে, দেশজুড়ে তা করা হবে। জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী করা মানেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জী করা নয়, তবে এটি আরেকটির পথ তৈরি করে দেয়, সেই জন্যই বাংলা ও কেরলের মতো রাজ্যগুলি জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর কাজ থামিয়ে এনআরসির বিরোধিতা করেছে।
২০০০ সালে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি সরকারের এনডিএ সরকারকে, কার্গিল পর্যালোচনা কমিটির তরফে নাগরিক এবং অ-নাগরিকদের তালিকা তৈরি বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছিল। ২০০১ সালে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং ২০০৩ সালে নাগরিককত্ব আইন পাস হয়।
২০০৩ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে, জনসংখ্যাপঞ্জী তৈরির ক্ষেত্রে কী জটিলতা রয়েছে, তা স্থির করতে এনডিএ এবং ইউপিএ, উভয় সরকারই, সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে কার্যকর করে। ২০০৬ সালে দেশজুড়ে তা করা হয়। পাইলট প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে, সচিব কমিটিকে পাইলট প্রকল্পটি দেশজুড়ে করার জন্য পরিকল্পনা করতে বলা হয়।
২০০৯ থেকে ২০১১ এর মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকায় জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী করা হয়। মুম্বই হামলার পর, এটিকে নিরাপত্তার বিষয় বলে ধরা হয়, উপকূল এলাকার জনসংখ্যাপঞ্জীর তথ্য ৬৫.৫০ লক্ষ বাসিন্দার তথ্য তৈরি করা এবং বাসিন্দার পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি বলে ধরা হয়। সেখানে বায়োমেট্রিকও যোগ করা হয়।
২০১৫-২০১৬ তে আবারও সেই তথ্য আপডেট করা হয়, অসম এবং মেঘালয়ে তা করা হয়নি, তবে সেখানে কিছু তথ্য আপডেট করা হয় কর্মীদের মাধ্যমে।
(পিটিআইয়ের তথ্য সংযোজিত হয়েছে)
Post a comment