পাঁচজন মানুষকে বৃহস্পতিবার গুলি করে মারে আলফা জঙ্গিরা
তিনসুকিয়া: মাঠ দিয়ে প্রাণপণে দৌড়তে দৌড়তে আচমকা মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন সহদেব নমশুদ্র। উনিশ বছর বয়স তাঁর। মুখ থুবড়ে পড়ার প্রায় সঙ্গেই সঙ্গেই তাঁর কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল একটি গুলি। আতঙ্কে হিম হয়ে গিয়ে ওই অবস্থাতেই কোনওমতে আবার দৌড় শুরু করলেন তিনি। এবার দৌড়ে ঢুকে পড়লেন মাঠের একপ্রান্তের ঝোপঝাড় ঘেরা জায়গাটায়। সেখান থেকে তাকিয়ে দেখলেন ফের চলল গুলি। অন্ধকারেই সেই গুলির আলোর ঝলকানি দেখতে দেখতে ভয়ে সাদা হয়ে যাওয়া সহদেব ওই গুলি চলার আলোতেয় লক্ষ করলেন, মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পাঁচটি মৃতদেহ।
অসমের তিনসুকিয়াতে বৃহস্পতিবার রাতের ওই গণহত্যার ঘটনায় কোনওক্রমে বেঁচে গেলেও এখনও সেই আতঙ্ক পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি সহদেব নমশুদ্র। জানালেন তাঁর মা।
যে পাঁচজনকে ওইদিন হত্যা করা হয়, তাঁদের মধ্যে দুজন ছিলেন সহোদর। অবিনাশ বিশ্বাস ও তাঁর ভাই অনন্ত বিশ্বাস। অনন্তের বয়স সবে আঠারো পেরিয়েছে। অবিনাশের একটি দু'বছর বয়সী মেয়ে আছে। মেয়ের নাম তানিশা। সে খালি বারবার জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে, বাবা কোথায় গেল!
ঘটনার দিন খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন ওই দুই ভাই। খেত থেকে এসে বসেছিলেন বাড়ির লাগোয়া নিজেদের চায়ের দোকানে। সন্ধে নেমে এসেছে তখন। চারপাশে নিঃসীম শূন্যতা। এমন সময় প্রায় অন্ধকার ফুঁড়েই যেন নেমে এল মুখোশ পরা কয়েকজন। তাঁদের চায়ের দোকানের সামনে। প্রথমে দুই ভাই কিছুই সন্দেহ করেননি। ওই মুখোশধারীরা তাঁদের নির্দেশ দেয় উঠে দাঁড়ানোর জন্য। মুখোশধারীদের কাছে অস্ত্র ছিল। তারপর নির্দেশ আসে সামনের ঘাসের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার। সেই নির্দেশ পালন করার পর তাঁদের বলা হয় হাঁটুমুড়ে উল্টোদিকে মুখ করে বসতে। ততক্ষণে সম্ভবত দুই ভাইই বুঝে গিয়েছিলেন, কী হতে চলেছে তাঁদের সঙ্গে।
আচমকা অন্ধকার ভেদ করে গুলির শব্দ বেজে ওঠে তারপর। খেতে কাজ করে ফিরে আসা ক্লান্ত, অসহায় দুটি শরীর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে আঁধারের মাটিতে।
তাদের পাশেই একলা পড়ে থাকে একটি দু'বছরের শিশুর নিষ্পাপ প্রশ্ন- 'ও মা, বাবা কোথায় গেল?'...