This Article is From May 02, 2019

কে এই মাসুদ আজহার? কোন কোন ভয়াবহ জঙ্গিহানার সঙ্গে জড়িয়ে তার নাম, জানুন

জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার এক সময় ওসামা বিন লাদেনের অতি ঘনিষ্ঠ সহকারি ছিল। বহু আফ্রিকান দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মদত দেওয়ার পান্ডা।

কে এই মাসুদ আজহার? কোন কোন ভয়াবহ জঙ্গিহানার সঙ্গে জড়িয়ে তার নাম, জানুন

১৯৯৩ সালে লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় মাসুদ আজহারের

নিউ দিল্লি:

অবশেষে জৈশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী' বলে ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জ মাসুদ আজহারের নামকে কালো তালিকার অন্তর্ভুক্তও করল। দীর্ঘদিন ধরেই পুলওয়ামা হানার দায়ে অভিযুক্ত জৈশ-ই-মহম্মদের প্রধানকে রাষ্ট্রপুঞ্জের কালো তালিকায় ঢোকানোর জন্য প্রবল চেষ্টা করছিল ভারত। কিন্তু, একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল চিন। এমনকি, পুলওয়ামা হানার পর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বাকি দেশগুলি যখন মাসুদ আজহারের ‘কালো তালিকা'য় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিল, সেই সময়ও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চিন।

কিন্তু কে এই মাসুদ আজহার? কী তার পরিচয়? একটু দেখে নেওয়া যাক।

জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার এক সময় ওসামা বিন লাদেনের অতি ঘনিষ্ঠ সহকারি ছিল। বহু আফ্রিকান দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মদত দেওয়ার পান্ডা। এছাড়া, গ্রেট ব্রিটেনের বহু মসজিদকে ব্যবহার করে জিহাদের ডাক দেওয়া এই জঙ্গি নেতাকে ধর্মের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কুখ্যাত ‘প্রাণপুরুষ' বলা যায়।

China On Masood Azhar: “সংশোধিত তথ্যসামগ্রী দেখার পর কোনও আপত্তি নেই”

এই ৫০ বছর বয়সী জঙ্গি নেতার প্রভাব এতটাই বেশি যে, ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আইসি-৮১৪ নামের বিমানটিকে হাইজ্যাক করে কান্দাহার বিমানবন্দরে দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছিল। তার বিনিময়ে তৎকালীন ভারত সরকার মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সেই রাতে ওসামা বিন লাদেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একটি ব্যাঙ্কোয়েট পার্টির আয়োজন করেছিলেন মাসুদ আজহারের ‘সম্মান'-এ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যাঙ্কোয়েটে দাঁড়িয়ে লাদেন স্মৃতিচারণ করেছিল, ১৯৯৩ সালে কীভাবে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মাসুদ আজহারের। কীভাবেই বা ওই সময় কাজ চালাত এই দুই বিশ্বত্রাস জঙ্গিনেতা।

আপত্তি প্রত্যাহার চিনের, আন্তর্জাতিক জঙ্গি মাসুদ আজাহার

১৯৯৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে জিহাদি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মাসুদ আজহারকে গ্রেফতার করে ভারত সরকার। ওই সময় তার অন্যতম ডানহাত, ব্রিটিশ নাগরিক ওমর শেখ, তৎকালীন অতি কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-আনসারের সদস্য, ভারত থেকে পণবন্দি করেছিল চারজন পশ্চিমী পর্যটককে। তাদের দাবি ছিল, মাসুদ আজহারকে ছাড়ার পর তবেই ওই বিদেশি বন্দিদের ছাড়া হবে। যদিও, তাতে তখন তারা সফল হয়নি। গোয়েন্দারা ওই চার পণবন্দিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে ওমর শেখের জিম্মা থেকে এবং গ্রেফতার করে ওই কুখ্যাত জঙ্গিকেও।

১৯৯৫ সালে ফের ৫ জন বিদেশি পর্যটকদের পণবন্দি করে হরকত উল আনসার মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে। পরে তাদের পাঁচজনকেই হত্যা করা হয়।

১৯৯৯ সালে কান্দাহারে বিমান হাইজ্যাক করার পর মাসুদ আজহারকে ছাড়তে বাধ্য হয় ভারত সরকার। তার কয়েকদিনের মধ্যেই ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদের। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাদামি বাগ ক্যান্টনমেন্টে প্রথম আত্মঘাতী হামলা চালায় জৈশ।

"ইতিবাচক অগ্রগতি", মাশুদ আন্তর্জাতিক অপরাধী তালিকাভুক্ত করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চিনের

ওই হামলায় মানববোমা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ২৪ বছর বয়সী আসিফ সাদিককে। মাসুদ আজহারের একদম প্রথম দিকে বাছাই করে তোলা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা ভয়ঙ্কর জঙ্গি। সেও ছিল ব্রিটিশ নাগরিক। ওই সময় আল কায়দার বহু জঙ্গিকেও নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যবহার করত মাসুদ আজহার।

সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পর যখন মাসুদ আজহার জখম হয়ে যায়, তারপর থেকেই তার মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় হরকত-উল-আনসারে নতুন আসা ছেলেদের ‘উদ্বুদ্ধ' করা। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শুরুতেই মাসুদ আজহার হরকত-উল-আনসারের মহাসচিব পদে বসে। তারপর তার কাজ হয়ে দাঁড়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে জঙ্গি সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। ওই দেশগুলির মধ্যে ছিল- জাম্বিয়া, আবু ধাবি, সৌদি আরব, মঙ্গেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন এবং আলবেনিয়া।

মাসুদের উপর চাপ বাড়ল,কালো তালিকাভুক্ত করতে নতুন পদক্ষেপ করল আমেরিকা

১৯৯৩ সালে আল-কায়দা জঙ্গি অধ্যুষিত কেনিয়াতেও যায় সে। সোমালিয়ায় দায়িত্বরত এক আল-কায়দা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গির সঙ্গে দেখা করার জন্য। ১৯৯৩ সালের অগস্ট মাসে গ্রেট ব্রিটেনে ঢোকে মাসুদ আজহার। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। তারপরই শুরু হয় ও দেশের সেই সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে বিশেষভাবে দক্ষ। ১৯৯৩ সালে মাসুদ আজহার সাজ্জাদ আফগানির সঙ্গে আসে বাংলাদেশে। ১৯৯৪ সালে ভারত থেকে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, সেই সময় সে ছিল হরকত উল মুজাহিদিন বা হরকত উল আনসারের সদস্য।

তার মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে হামলা। ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি পাঠানকোটে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে হামলা। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উরিতে সেনাবাহিনীর সদর দফতরে হামলা। যাতে শহিদ হন ১৭ জন জওয়ান। আহত হন আরও ৩০ জন।

.