Supreme Court: মহিলাদের স্থায়ী কমিশনের বিষয়েও রায় দেবে দেশের শীর্ষ আদালত
হাইলাইটস
- ভারতীয় সেনায় মহিলারাও নেতৃত্ব দিতে পারবেন, বলল সুপ্রিম কোর্ট
- মহিলাদের নির্দেশ মানার মানসিকতা নেই পুরুষ সেনার, যুক্তি দেয় কেন্দ্র
- কেন্দ্রের যুক্তি বৈষ্যমমূলক ও বিরক্তিকর, সাফ জানাল দেশের সর্বোচ্চ আদালত
নয়া দিল্লি: এবার পুরুষদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনা বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন মহিলারাও। এক ঐতিহাসিক রায়ে সেনায় মহিলাদের নেতৃত্বের পক্ষেই সায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court)। মহিলা কমান্ডারের (Woman in Combat) প্রসঙ্গে সোমবারই ওই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই অনুমোদনের ফলে এবার সেনাবাহিনীর (Indian Army) মহিলারাও তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের মতোই নেতৃত্ব দিতে পারবেন এবং নিজের কেরিয়ারকে আরও ভালও জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। সেনায় মহিলা নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, "মহিলাদের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে তাঁদের অধিকারের কোনও যোগসূত্র নেই। প্রয়োজনে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।" কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয় যে, সেনা বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন কোনও মহিলা সেই মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি ভারতীয় সেনার মধ্যে। কেন্দ্রের এই যুক্তিকে বৈষম্যমূলক ও বিরক্তিকর আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে এবার সময় হয়েছে এই ধরণের "চিরাচরিত ভাবনা" থেকে বেরিয়ে আসার।
"ব্যক্তিত্ব নয়, কলিজার জোর দেখা হয় সেনাবাহিনীতে": ক্যাপ্টেন তানিয়া শেরগিল
সরকার পক্ষের আইনজীবী মামলার শুনানিতে বলেন, এ দেশে এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে মহিলাদের নেতৃত্বের জন্যে ঠিক উপযুক্ত নয়। রণক্ষেত্রে মহিলাদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জওয়ানরাও ততটা প্রস্তুত নন। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে নানা অসুবিধা রয়েছে মহিলাদের।
সম্প্রতি কম্যান্ডিং অফিসারের পদের জন্য দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন কয়েকজন মহিলা। সেই আবেদনের বিরোধিতায় সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে কোনও র্যাঙ্কেই পুরুষদের আধিপত্য বেশি। এই সব জওয়ানরা সাধারণত গ্রামীণ এলাকা থেকে আসেন। সংস্কারবদ্ধ মানসিকতার কারণে কোনও মহিলা কম্যান্ডিং অফিসারকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়াও অন্য কারণও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় অথবা কোনও দুর্গম জায়গায় পোস্টিংয়ের সময় যে শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার দরকার, সেটা মহিলাদের ক্ষেত্রে খুব একটা থাকে না। তাই কমব্যাট ফোর্সে মহিলাদের না নেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী আর বালাসুব্রহ্মনিয়ম ও আইনজীবী নীলা গোখেল। কেন্দ্রীয় আইনজীবীদের এই যুক্তি খারিজ করে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগি বলেন, প্রশাসনের মানসিকতার বদল দরকার। তবেই সেনাবাহিনীতে মহিলা-পুরুষ এই বৈষম্য দূর হবে। কম্যান্ডিং অফিসার শুধু নয়, সেনাবাহিনীর অন্যান্য পদেও মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকা উচিত নয়। কেননা মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।
"সেনাবাহিনী ভারতের সংবিধান রক্ষার শপথ গ্রহণ করেছে": বললেন সেনাপ্রধান
সেনাবাহিনীর শর্ট সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) ১৪ বছর চাকরি করা মহিলাদের স্থায়ী কমিশনের বিকল্প দেওয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গও তোলা হয় আদালতে। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এসএসসিতে ১৪ বছরের চাকরির সময়কালে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, সকল মহিলা অফিসারকে স্থায়ী কমিশন দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের অগাস্টে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছিলেন যে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর মহিলা অফিসারদের জন্যে এবার শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্থায়ী কমিশন নেওয়ার বিকল্প রাখা হবে।
শর্ট সার্ভিস কমিশন অনুসারে, একজন মহিলা অফিসার ১০-১৪ বছর সেনায় কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি মহিলা অফিসারদের সেনা সার্ভিস কর্পস, অর্ডিন্যান্স, সেনা শিক্ষা ক্ষেত্র, বিচারপতি অ্যাডভোকেট জেনারেল, ইঞ্জিনিয়ার, সিগন্যাল, গোয়েন্দা ও বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রেও নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।