শহর থেকে জেলা, নেতা, মন্ত্রীরা জনসংযোগ বাড়াতে পৌঁছে যাচ্ছেন জনগণের বাড়িতে বাড়িতে
কলকাতা: লোকসভা ভোটে বিপর্যয়। পদ্ম চাপে জোড়াফুলের নুয়ে পড়ার জোগাড়। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমোর ক্যারিশ্মা নিয়ে। দলের নিচুতলার নেতা, কর্মীরা যে ক্ষমতার অলিন্দে থেকে জনসংযোগ হারিয়েছেন তা স্পষ্ট হয়। মনে করা হচ্ছিল, মোদী বিরোধীতায় নেত্রীর রনংদেহী মেজাজ বাংলার বহু মানুষই পছন্দ করেননি। ফলে দেশ পরিচালনার ভোটে তৃণমূলের (TMC) বদলে বাংলার একটা বড় সংখ্যার ভোটার বেছে নিয়েছেন বিজেপিকে (BJP)। বছর দু'য়েকের মধ্যেই বিধানসভা ভোট। তাহলেকি ঘাস ফুল ছেড়ে পদ্মের গন্ধেই মম করবে বঙ্গের মাটি? নানা প্রশ্ন যখন দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখনই আবির্ভাব ভোট স্ট্র্যাটিজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor)। আপাতত তাঁর পরামর্শ মেনেই নির্ধারিত হচ্ছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মসূচি। আশা প্রশান্তের ছোঁয়াতেই ফের স্বমহিমায় দেখা যাবে ‘ব্র্যান্ড মমতা'র (Mamata Banerjee) কারসাজি।
লোকসভা ভোটের ঠিক পরেও দেখা গিয়েছে আক্রমণাত্মক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু তা দিয়ে যে চিঁড়ে ভিজবে না তা অনুধাবন করতে পারছিলেন স্বয়ং নেত্রী (Mamata Banerjee)। তাই দলীয় নেতা কর্মীদের বার্তা দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তড়িঘড়ি প্রয়োগ করা হয় পেশাদারিত্বের ছোঁয়া। তৃণমূলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেন প্রশান্ত কিশোর।
প্রথম কয়েকদিন তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠক। তারপর, নেত্রীর সঙ্গে দলের নেতা, কর্মীদের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রোগ ধরার চেষ্টা করেন তিনি। এরপরই শুরু হয় সমাধানের চেষ্টা। তৃণমূল ব্যক্তিকেন্দ্রীক দল। সেই দলের সুপ্রিমোর ভাবমূর্তিই শেষ কথা। সেখানেই চিড় ধরেছে। ফলে শুরু হয় নেত্রীকে সামনে রেখে দলের সংযোগ বৃদ্ধির কাজ। যার অঙ্গ, ‘দিদিকে বলো' ফোন নম্বর ও ওয়েসাইট। শহর থেকে জেলা, নেতা, মন্ত্রীরা জনসংযোগ বাড়াতে পৌঁছে যাচ্ছেন জনগণের বাড়িতে বাড়িতে। রাত্রিবাস করছেন সেখানেই।
ক্রোধের বশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যারে বলা কথাকে অনেক সময় সমালোচমার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন বিরোধী শিবির। অস্বস্তিতে পড়তে হয় জোড়াফুল শিবিরকে। লোকসভা ভোটের প্রচারে এই ধরণের বেশ কিছু প্রমাণ রয়েছে। ভোটে স্ট্র্যাটিজিস্ট প্রশান্তের (Prashant Kishor) নজর এড়ায়নি বিষয়টি। তাঁর নির্দেশেই দিদি এখন ‘কথা কম, কাজ বেশি'তে গুরুত্ব দিযেছেন। নেত্রী এখন কথা বলছেন মেপে। এযেন অনেকটাই অচেনা মমতা। এর পিছনেও হাত রয়েছে প্রশান্তের।
তৃণমূল নেতৃত্বের কথায়, মেপে পা ফেলেই ২০১৯-এ বাংলা জয় করতে চাইছেন সুপ্রিমো। তাদের মতে, লোকসভায় রাজ্যের ৪২টির মধ্যে ২২টিতে জিতেছে তৃণমূল। ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাবে, বিধানসভায় ১৭০ আসনে এগিয়ে তৃণমূল। ২০১৬ সালে জোড়াফুল শিবির জিতেছিল ২১১ আসনে। যেসব আসনে লোকসভায় এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল সেগুলিকে ‘এ' ক্যাটাগরি বলে ধরা হয়েছে। অল্প ব্যধানে হার হয়েছে প্রায় ৫০ বিধানসভা আসনে। যেগুলি ‘বি' বলে বিবেচিত। পরাজয় হয়েছে এমন সব কেন্দ্রেই প্রশান্ত কিশোর নেতাদের জনসংযোগের কাজে জোর দিতে বলেছেন। যাতে বিমুখ ভোটারদের ফের কাছেটানা যায়। আর এতেই বাজি মাত সম্ভব বলে আশা তামাম ঘাসফুল নেতা, কর্মীদের।
২০১৪ সালের ‘চায়ে পে চর্চা' বা জেডিইউ, তেলেহঙ্গানায় ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল প্রশান্ত কিশোরের। ২১শের বৈতরণী পারে এবার তাঁরই হাত ধরেছে তৃণমূল। প্রশ্ন, এই ধারা কতদিন বজায় থাকবে। তৃণমূল সুপ্রিমোর পক্ষে কি প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) সব নির্দেশ মেনে চলা সম্ভব। অনেকেই মনে করছেন নেত্রীর মেজাজটাই আসন মালিক!
আর যাদের গুঁতোয় এত দ্রুত নিজের বদলে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া দিলেন দিদিমণি, সেই বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব এখন মুচকি হাসছে। তারা মনে করছেন, ‘এটা অন্তত প্রমাণিত মমতা ক্যারিশ্মা প্রায় বিলুপ্তির পথে।'
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)