This Article is From Sep 10, 2018

হিজাব পরেই ছক ভাঙার খেলায় মেতেছেন কেরালার মহিলা বডিবিল্ডার

মাজিজিয়া ভানুর বিশ্বাস হিজাব কোনও মহিলার স্বপ্ন পূরণ আটকাতে পারে না। একজন মহিলা যদি নিজের শরীর স্বাধীনভাবে খোলা রাখতে পারে, তবে সে স্বাধীনভাবে নিজের শরীর ঢেকে রাখতেও পারে।

হিজাব পরেই ছক ভাঙার খেলায় মেতেছেন কেরালার মহিলা বডিবিল্ডার

অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতা কখনওই হিজাব ছাড়া দেখা যায়নি মাজিজিয়া ভানুকে।

ভাদাকারা, কেরালা:

23 বছরের মাজিজিয়া ভানু মিস্টার কেরালা কম্পিটিশনে মহিলাদের বিভাগে মঞ্চে এসে যখন দাঁড়ালেন সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। কারণ এর আগে কখনও কোনও মহিলা বডিবিল্ডিং-এর প্রতিযোগিতায় হিজাব পরে অংশগ্রহণ করেনি। সকলকে অবাক করে ওই অনুষ্ঠানের বিজেতা হয়ে তিনি প্রমাণ করলেন হিজাব কোনও মেয়ের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

শ্রীমতী ভানু প্রমাণ করলেন হিজাব কোনও মহিলার স্বপ্ন পূরণ আটকাতে পারে না। একজন মহিলা যদি নিজের শরীর স্বাধীনভাবে খোলা রাখতে পারে, তবে সে স্বাধীনভাবে নিজের শরীর ঢেকে রাখতেও পারে। তিনি বিশ্বের একমাত্র মুসলিম মহিলা নন যিনি আর্ম রেসলিং এবং পাওয়ার লিফটিং করেছেন; আরও অনেক মহিলাই আছেন যারা হিজাব পরে এই কাজ করেন।   

“আমাদের নাম শোনার পরেই সবাই বুঝতে পারে আমরা মুসলিম”, তিনি জানান। এছাড়াও বলেন, “হিজাব পরে আমি গর্ব বোধ করি। এটা আমার পরিচয়ের অঙ্গ। এটা আমাকে কোনও সীমানা বেঁধে দেয়নি বরং আমাকে আত্মবিশ্বাস ও শক্তি জুগিয়েছে।“

মাত্র দুই বছরেই শ্রীমতী ভানু একজন সাধারণ ডেন্টাল ছাত্রী থেকে স্থানীয় তারকা হয়ে উঠেছেন, তাও শুধুমাত্র নিজের গ্রামেই নয়, সমগ্র কেরালায়। কেরালা রাজ্য পাওয়ারলিফটিং অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা তিনি তিনবার সবচেয়ে শক্তিশালী মহিলা নির্বাচিত হয়েছেন।

এই দুই বছরে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তিনি পাওয়ারলিফটিং এবং আর্মরেসলিং-এ জাতীয় স্তরে মেডেল লাভ করেছেন। অনুশীলন হোক কিংবা প্রতিযোগিতা সব সময় হিজাব পরে থাকতে দেখা যায় শ্রীমতী ভানুকে।

“প্রথম প্রথম পুরুষরা আমি হিজাব পরায় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু তারপরেই ওরা বুঝতে পারে আমি ওদের মতোই নিজের ওয়ার্কআউট নিয়ে সিরিয়াস। তারপরেই তাদের চোখগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়”, আইএএনএস-কে জানান শ্রীমতী ভানু।

খেলাধুলায় তাঁর প্রবল আগ্রহ থাকা সত্বেও তাঁর গ্রামে কোনওরকম সুযোগসুবিধা ছিল না। তাই প্রতিদিন নিজের ডেন্টাল ক্লাস শেষ করে তিনি 60 কিমি. ট্রেনে চেপে কোঝিকোড়ের একটা জিমে যেতেন।  

“আমি রাত 9টায় বাড়ি ফিরতাম। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল। তারপর আসতে আসতে আমি আত্মবিশ্বাস পেলাম এবং একা যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। তারপর আমার রুটিনের এটা একটা অংশ হয়ে গেল”, শেষ বর্ষের ডেন্টাল ছাত্রী জানলেন।  

ভানু আরও জানান, বাবা মায়ের সহযোগিতা তাঁকে এই স্থান অর্জন করতে সাহায্য করেছে।

“আমি একটা প্রাচীনপন্থি গ্রামে বড় হয়েছি। কিন্তু আমার মা বাবা আমার পাশে থেকেছেন এবং আমার বডিবিল্ডিং-এর নেশাটা আমাকে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।“

আজ গ্রামে সমবয়সী মেয়েদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা। তাঁর সাফল্যের পর আজ গ্রামে নতুন একটা জিম আছে, যেখানে ছেলেদের মতোই মেয়েদের ভিড় লেগেই থাকে।

“অনেক কমবয়সী মেয়ে এবং মহিলাই আমার কাছে উপদেশ চাইতে আসা শুরু করেছে। তারাও আজ আমার মতোই হতে চায়। এখন আমার গ্রামেও একটা জিম আছে”, জানান ভানু। পাশাপাশি একথাও বলেন কোঝিকোড়ে এখন তিনি মাসে মাত্র তিন বা চারবার যান।  

আগামী মাসে তুর্কিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ওয়ার্ল্ড আর্ম রেসলিং চ্যাম্পিয়ানশিপ 2018, যার জন্য জোড় কদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছেন ভানু।

“আমি জানতাম না আমি এই পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো কিনা। কারণ অখানে যেতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আমি বেশ কিছু মানুষের সাহায্য চাই এবং শেষপর্যন্ত তাঁদের সহযোগিতায় আমি ফান্ড জোগাড় করতে সক্ষম হই। আর সেই সময়েই বুঝতে পারি, আমি মুসলিম হওয়ায় অনেকেই আমাকে সাহায্য করেনি”, জানান শ্রীমতী ভানু।  

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শ্রীমতী ভানু জানান, তিনি আগে নিজের পড়াশোনা শেষ করতে চান কারণ তাঁর বাবা মায়ের স্বপ্ন তাঁকে ডাক্তার তৈরি করা।

“একবার আমি নিজের পড়াশোনা শেষ করি তারপর আমি একটা অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করবো যেখানে একই সঙ্গে মার্শাল আর্ট, পাওয়ার লিফটিং, আর্ম-রেসলিং এবং বডিবিল্ডিং-এর ট্রেনিং দেওয়া হবে। আমি মেয়েদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেবো, আমি নিশ্চিত আমি নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পারবো এবং মহিলাদের শক্তিশালী করে তুলতে পারবো”, দৃঢ়ভাবে বলেন ভানু।

.