কোভিড-১৯ এর ফলে মৃত্যুতেই কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে না আতঙ্ক। যিনি বা যাঁরা মারা যাচ্ছেন বা আক্রান্ত হচ্ছেন সামাজিকভাবে হোক বা মানসিকভাবে সেই ভুক্তভোগীদের পরিবারও শেষ হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে এক মহিলা রেলস্টেশনের একটি ফুটব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে ওই মহিলার স্বামী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার স্বামী স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কোভিড পজিটিভ হিসেবে তাঁর মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরেই আত্মহত্যা করতে যান ওই মহিলা। সন্তানসহ তিনজনকেই গুরুতর আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছে।
স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে এসে পৌঁছনোর পরেই পুলিশ এসে তাদের বাড়ির দিকে গলিটি ব্যারিকেড করে দেয়। ওই মহিলা আশঙ্কায় ছিলেন ছিলেন যে তিনি এবং শিশুদের দেহেও কোভিড পজিটিভ ধরা পড়তে পারে। ব্যারিকেড করে দেওয়ার ফলে সমাজেও তিনি একঘরে হয়ে যাবেন এই আশঙ্কাও ছিল তাঁর।
তবে মৃত্যুর খবরের পরে প্রতিবেশী এবং পুলিশ গলি ব্যারিকেড করলেও কোনওভাবে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে মহিলা বেরিয়ে পড়েন, একটি অটো নিয়ে স্থানীয় নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে যান।
সূত্রের খবর, ওই মহিলা তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে ফুট ওভারব্রিজে উঠেছিলেন। যাত্রীরা তাঁকে থামানোর আগেই তিনি বাচ্চাদের আঁকড়ে ধরে নীচে রেললাইনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহিলার দুই কন্যার একজনের বয়স ২ এবং একজনের ৪।
তাঁদের বর্তমানে শহরের রাজ্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক শিলিগুড়ি! উত্তরের এই শহরে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দার্জিলিং জেলার সমস্ত জেলায়, যেখানে শিলিগুড়ি একটি প্রধান শহর, সব মিলিয়ে ৬৮৪ টি কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং ১০ জন মারা গেছেন।
সাধারণ মানুষ কোয়ারান্টাইনড বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যাওয়াও এড়িয়ে চলছেন বলে খবর মিলেছে। মানসিক এই অসচেতনতা এখন এক মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাঁশের খুঁটি দিয়ে কোভিড পজিটিভদের বাড়িগুলিকে ব্যারিকেড করার পরিবর্তে পুলিশের রিবন বা চেন ব্যবহার করা যেতে পারে কিনা সেই বিষয়ে নাগরিক তথা স্বাস্থ্যবিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে।