আরলিংটন: চোখে ভালো দেখতে পান না মার্লা এল অ্যান্ড্রুস। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিয়াত্তরে পা দেওয়া অ্যান্ড্রুজ তাঁর বসার ঘরে বসে ইতিহাসে এক খণ্ড নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। চশমা পরা চোখের সামনে, ছোট প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢোকানো সোনার আংটির দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন বৃদ্ধা। দৃষ্টি আবছা, ফলত আংটিতে খোদাই করা শব্দ তেমন স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলনা। আংটির ভেতর দিকে খোদাই করে লেখা, "P.D." তারপর একটা তীরবিদ্ধ হৃদয়, শেষে লেখা "L.E.D. 5-31-43।"
পিডি আসলে তাঁর মা ফিলিস ডিকসন, আর এলইডি তাঁর বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টাস্কিগী পাইলট যোদ্ধা, ক্যাপ্টেন লরেন্স ই ডিকসন। 31 মে, 1943 ছিল তাঁর 23 তম জন্মদিন।
ডিকসন টাস্কিগী আর্মি ফ্লাইং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মাত্র ২4 বছর বয়সে ২3 শে ডিসেম্বর 1944 তারিখে পর্বতীয় দক্ষিণ অষ্ট্রিয়ায় এসকর্ট মিশন চলাকালীন মারা যান তিনি।
প্রায় ৭3 বছর পর হঠাৎ করেই হঠাৎ করেই গত গ্রীষ্মে নিউ অরল্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পড়ুয়া তিতাস ফারমিন ওই এলাকায় খননকার্যের সময় তাঁর এই আংটিটি খুঁজে পান।
বিমানের কয়েকটি ভাঙা অংশ ছাড়াও বহু ব্যক্তিগত জিনিস পাওয়া যায় ওই এলাকা থেকে। বৃহস্পতিবার, মাইকেল মি, পাস্ট কনফ্লিক্ট রেপার্ট্রিয়েশন বিভাগের চিফ অ্যান্ড্রুসকে ফিরিয়ে দেন এই আংটি।
একটি সাদা টিস্যু এবং একটি কালো মার্কার নিয়ে বসলেন অ্যান্ড্রুজ। পরণে কালো স্কার্ট আর রঙিন জামা। খুঁটিয়ে দেখলেন ইতিহাসের এই খণ্ড মুহুর্তকে।
14 ক্যারটের এই সোনার আংটি তাঁর জীবনের এমন একজন মানুষের সাক্ষ্য বহন করছে যাকে তিনি সেভাবে চেনেনই না।
কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল খনন কার্যে আংটি পাওয়ার গল্প। শেষমেশ বৃহস্পতিবার মি তাঁর স্যুটকেস থেকে বের করে অ্যান্ড্রুজের হাতে তুলে দেন আংটিটি।
"এই সেই আংটি"- তিনি বলেন
শান্ত গলায় অ্যান্ড্রুজ বললেন, "অসাধারণ"
‘আমি কি প্লাস্টিক থেকে বের করে দেব আংটিটা?” জিজ্ঞেসও করেছিলেন মী।
রাজি হননি অ্যান্ড্রুজ। হয়ত এত কাছ থেকে স্মৃতি ছুঁয়ে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনিও।
খননের সময় আংটিটার জলরঙা পাথরটিও পাওয়া যায় ওইখানেই। তবে তা ভেঙে গিয়ে আংটি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। অন্য একটি প্লাস্টিকে মুড়ে সেটি তুলে দেওয়া হয় অ্যান্ড্রুজের হাতে। অ্যান্ড্রুস বলেন তাঁর মা জলরঙ পছন্দ করতেন, হয়ত তাই বাবার জন্মদিনে অমন আংটি উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে।
মী ওই সাইটে পাওয়া একটি হরমোনিকার ভগ্নাবশেষ আর একটি ছোট ক্রসও নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে।
ক্যাপ্টেন ডিকসন সঙ্গীত পছন্দ করতেন। তিনি নিজে গিটার শিখেছিলেন এবং যখন তিনি বিদেশে যান তখন একটি বৈদ্যুতিক গিটারও সঙ্গে নিয়েই গিয়েছিলেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর গিটারটি ফিরে আসেনি পরিবারের কাছে।
ক্র্যাশ সাইটে পাওয়া হাড়ের টুকরোর ডিএনএ-র সাথে অ্যান্ড্রুজের ডিএনএ পরীক্ষা করেও দেখা হয়। ওই এলাকা থেকে ডিকসনের পাঁজর, মেরুদণ্ড, বাহু আর পায়ের হাড়ের ছোট ছোট টুকরোও পাওয়া যায়। মী জানান, ওই বিমানে আগুল লেগে গেছিল, তারপরেই ধ্বংস হয় সেটি।
নিউ অরল্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওডব্লিউ / এমআইএ অ্যাকাউন্টিং এজেন্সি এই খননকার্যটি পরিচালনা করে। সহযোগিতা ছিল নিউ অরল্যান্সের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাদুঘর এবং অষ্ট্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই যুদ্ধে ব্যবহৃত 26 টি টাস্কিগী বিমানের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি।
লরেন্স ডিকসন 1941 সালের নভেম্বরে ফিলিস কনস্ট্যান্স মেইলার্ডকে বিয়ে করেছিলেন। (পরে আবার একবার বিয়ে করেন তিনি এবং 28 ডিসেম্বর, 2017 তে 96 বছর বয়সে নেভাদাতে মারা যান।) এই দম্পতি নিউইয়র্ক শহরেই বসবাস করত। মার্লার জন্ম 14 ই জুলাই, 1942।
নিজের আটষট্টি তম মিশনে বেরিয়েছিলেন ডিকসন। প্রাগের পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার প্রায় এক ঘণ্টা পর ডিকসন রেডিওয় জানিয়ে ছিলেন তাঁর বিমানের ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে এবং গতিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে। সেই সময়েই প্লান থেকে নেমে যেতে চেয়েছিলেন তিনি এওং তাঁর সঙ্গী । প্যারাস্যুট খুঁজছিলেন তাঁরা। কিন্তু আর্মি বিমানে মজুত ছিল না কিছুই। আর নীচে কেবলি বরফে ঢাকা পাহাড়।
যুদ্ধের পরে, আর্মি উত্তর ইতালিতে ডিকসনের অনুসন্ধান করেছিল। অন্য ক্র্যাশড প্লেনের অবশেষ পাওয়া যায় সেখানে কিন্তু ডিকসনের খোঁজ মেলে না। 1949 সালে সেনাবাহিনী ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা করে ডিকসনকে।
অ্যান্ড্রুসের ইচ্ছার আরিলিংটন জাতীয় কবরস্থানে বাবাকে কবর দিতে চান তিনি।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)Click for more
trending news