নেপালের লোকসাহিত্যে ইয়েতিকে ‘ভয়ঙ্কর তুষারমানব’ (abominable Snowman) বলেই ডাকা হয়েছে
নিউ দিল্লি: কাকাবাবুর ইয়েতি অভিযানের পরে ফের বাঙালির কাছে আলোচ্য হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকার এই অদেখা ‘সন্ত্রাস'। সৌজন্যে ৩২X১৫ ইঞ্চি বা ৮১X৩৮ সেন্টিমিটারের পা। ভারতীয় সেনা আজ বিশালাকার এই ‘রহস্যময় পদচিহ্নের' (mysterious footprints) ছবি শেয়ার করে শুধু বাঙালি নয়, সারা দেশেই ফের ইয়েতি (mythical beast "Yeti")নামের এক অজানা অদেখা ভয় ও কল্পনা উস্কে দিয়েছে। মাকালু-বরুণ জাতীয় উদ্যানের (Makalu-Barun National Park) কাছাকাছি নাকি এই অদ্ভুত কাল্পনিক প্রাণি ইয়েতির পায়ের ছাপ মিলেছে। বহু কাল ধরে লোকসাহিত্যে এবং মানুষের মুখে মুখে এই কাল্পনিক তুষারমানবের গল্প শোনা গেলেও আজ অব্দি একে দেখতে পাননি কেউই, নেই ছবিও। কেবল মাঝে মাঝেই বিশালাকার পায়ের ছাপ ও টুকরো কিছু জিনিস কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে। লোকসাহিত্যে এবং জনমানসে ইয়েতি নিয়ে কী কী ধ্যানধারণা রয়েছে জেনে নিন:
৩২ X ১৫- ইঞ্চির রহস্যময় পায়ের ছাপ দেখা গেছে, কার পায়ের ছাপ!
নেপালের লোকসাহিত্যে ইয়েতি
নেপালের লোকসাহিত্যে ইয়েতিকে ‘ভয়ঙ্কর তুষারমানব' (abominable Snowman) বলেই ডাকা হয়েছে, যাকে খানিক বনমানুষের মতো দেখতে, যে কোনও মানুষের থেকেই বিশালাকার এবং মানুষের বিশ্বাস এই প্রাণি হিমালয়, সাইবেরিয়া, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ায় বাস করে।
ইয়েতির নানা কিংবদন্তী
১৯ শতকেরও আগে ইয়েতিকে হিমবাহের প্রাণি (Glacier Being) বলে মনে করা হত! সেই সময় আদিবাসীরা ইয়েতিকে পুজো করত। মানুষ বিশ্বাস করত ইয়েতি আসলে বনমানুষের মতোই কোনও প্রাণি, যার সঙ্গে অস্ত্র হিসেবে থাকে একটা বিশাল পাথর, এবং পাহাড়ে শিস দিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে।
হিমালয়ের অভিযাত্রীদের অনেকে বারেবারেই হিমালয়ের বরফের মধ্যে একটি বন্য লোমশ জন্তুর গল্প শুনিয়েছেন। ১৯২০-র পর থেকে নেপালের এই পর্বতমালাকে ঘিরে এবং এর মধ্যে অদেখা ভয়ের এই কল্পকাহিনী মানুষের কাছে আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই, ইয়েতির পায়ের ছাপ, লোমের অংশ এসব দেখা গিয়েছে বলে দাবি উঠেছে কিন্তু আজ অব্দি কেউই এই ধরণের কোনও প্রাণির কোনও বিশ্বাসযোগ্য ছবি দেখাতে পারেননি।
ইয়েতি এবং তার বিভিন্ন নাম
হিমালয়ের মানুষ বিভিন্ন নাম দিয়েছে এই অদেখা অজানা প্রাণিকে। তিব্বতি ভাষায়, ইয়েতিকে ‘মিচে' বলা হয়, যার অর্থ ‘মানুষ ভাল্লুক'। অনেকে আবার ইয়েতিকে ‘ডিজু-তেহ' হিসাবেও উল্লেখ করেছে, যার অর্থ গবাদি ভাল্লুক বা হিমালয়ের বাদামী ভালুক। এর অন্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে মিগই (বন্য মানুষের তিব্বতি নাম), বান মঞ্চি (জংলি মানুষের নেপালি নাম), মিরকা এবং কাং আদমি।
ফেনি আসছে ফণা উঁচিয়ে, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পিছোল ভারতীয় বায়ুসেনা
ইয়েতি এবং ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টিনটিন'
জনপ্রিয় কার্টুন ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টিনটিন'-এর একটি পর্বে ইয়েতির উল্লেখ রয়েছে। এখানে ইয়েতিকে দেখানো হয়েছে এমন একটি জীব হিসেবে যা মানুষের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য নকল করতে পারে। এখানে ইয়েতি কেবল বুনো জন্তু নয়, বরং মানুষের মতো মন থাকা একটি প্রাণি।
সম্প্রতি, ২০১৬ সালে ট্র্যাভেল চ্যানেলে ‘হান্ট ফর দ্য ইয়েতি' নামে একটি বিশেষ চার পর্বের অনুষ্ঠানও হয়েছে।
ইয়েতি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা
গবেষকরা অবশ্য এতদিনেও ইয়েতির অস্তিত্বের সামান্যতম প্রমাণই খুঁজে পেয়েছেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি গোষ্ঠী হিমালয় অঞ্চল জুড়ে সংগৃহীত একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা নিয়ে গবেষণা করেন এবং অবশেষে জানান, ওসবই আসলে ভাল্লুকের।
২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুইজন দাবি করেন যে, তারা একটি অর্ধ মানুষ, অর্ধেক বানরের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে। যদিও পরে জানা যায় যে, ওটি আসলে একটি রবারের তৈরি গোরিলার পোশাক।